SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা: প্রধান কারণগুলি বিশ্লেষণ
পশ্চিমবঙ্গে SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব: এক দীর্ঘসূত্রিতা
▸ বহুস্তরীয় অনুমোদন প্রক্রিয়া
একজন উদ্যোক্তাকে একাধিক দপ্তর (শ্রম, কর, পৌরসভা, শিল্পোন্নয়ন) থেকে অনুমতি নিতে হয়।
প্রায় 20–25 দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায় শুধুমাত্র বাণিজ্যিক লাইসেন্স পেতে।
▸ অনলাইন পোর্টালের কার্যকারিতা সীমিত
তথাকথিত ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা বাস্তবে ধীরগতি ও ভুলে ভরা।
e-Marketplace বা Udyam Registration-এর মতো পোর্টালেও প্রায়শই নথিপত্রের জটিলতা দেখা যায়।
➡ ফলাফল: পশ্চিমবঙ্গে SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব এতটাই প্রকট যে, উদ্যোক্তার আর্থিক পরিকল্পনা ভেঙে পড়ে।
নিয়মের অস্পষ্টতা এবং দপ্তরভেদে ব্যাখ্যার পার্থক্য
▸ একই বিষয়ে ভিন্ন দপ্তরের ভিন্ন নির্দেশনা
MSME বিভাগ ও কর দপ্তরের মাঝে সমন্বয়ের অভাব।
লাইসেন্স নবীকরণে প্রতিবারই নতুন নীতির খসড়া এসে পড়ে।
▸ বিধিনিষেধের তাত্ত্বিকতা বনাম বাস্তবতা
অনেকে অভিযোগ করেন, যে আইন কাগজে লেখা থাকে, বাস্তবে তার প্রয়োগ ভিন্নভাবে হয়।
প্রান্তিক উদ্যোক্তারা নিয়ম বোঝার আগেই ভুলে ফেঁসে যান।
➡ ফলাফল: SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা রূপ নেয় এক অন্তর্জালিক জটের, যার মূলে আছে প্রশাসনিক দ্ব্যর্থতা।
ট্যাক্স ও পরিদর্শন সংক্রান্ত প্রশাসনিক বিলম্ব
▸ GST রেজিস্ট্রেশনে দেরি
নতুন SME ব্যবসায় ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশনে কমপক্ষে 10–15 কর্মদিবস লাগে, যা SME ব্যবসার প্রসার বাধাগ্রস্ত করে।
▸ হঠাৎ কর পরিদর্শনের হুমকি
ব্যবসা শুরু হতেই পরিদর্শন আসা এক ভয়ানক প্রবণতা।
অনেক ক্ষেত্রেই SME মালিকদের হয়রানির শিকার হতে হয় নথিপত্রে সামান্য ভুলের জন্য।
➡ ফলাফল: প্রশাসনিক বিলম্ব SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ট্যাক্সভীতি ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে।
SME ব্যবসা পরিচালনায় সরকারি সহযোগিতার ঘাটতি
▸ সরকারি ইনসেনটিভের অজানা বাস্তবতা
অনেক উদ্যোক্তা জানেনই না তাঁদের জন্য কী কী প্রণোদনা রয়েছে।
জেলায় জেলায় SME পরামর্শ কেন্দ্র থাকলেও অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়।
▸ প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যত শূন্য
দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য যে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, তা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রায় অনুপস্থিত।
➡ ফলাফল: SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব ছাড়াও, পরবর্তী ধাপে উন্নয়নের পথও রুদ্ধ হয়ে পড়ে।
বিনিয়োগ নিরুৎসাহ ও কর্মসংস্থান হ্রাস
▸ আমলাতন্ত্রের কারণে বিনিয়োগকারীদের সরে যাওয়া
একাধিক আন্তর্জাতিক ও আন্তঃরাজ্য লগ্নিকারী পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শুধুমাত্র প্রশাসনিক জটিলতার জন্য।
▸ SME খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়া
নতুন SME তৈরি না হওয়ায় যুবকদের জন্য কাজের সুযোগও কমে যাচ্ছে, যা পশ্চিমবঙ্গে শিল্প বিকাশের সমস্যা আরও বাড়াচ্ছে।
➡ ফলাফল: প্রশাসনিক জটিলতা কেবল SME ব্যবসা নয়, রাজ্যের অর্থনীতিকেই গলাটিপে ধরেছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ, অথচ উপেক্ষিত দিক: ফিডব্যাক মেকানিজমের অভাব
অনেক উদ্যোক্তা অভিযোগ জানানোর প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পান না।
অভিযোগ জানালেও প্রশাসনিক স্তরে প্রতিক্রিয়া প্রায় শূন্য।
➡ ফলাফল: পশ্চিমবঙ্গে SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব বারবার ঘটছে, কারণ ভুল থেকে শিক্ষা নেবার কোনো ব্যবস্থাই নেই।
পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বিলম্ব এখন কেবল সময় নষ্ট নয়, এটি একপ্রকার প্রবল প্রতিকূলতা যা SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। যদি এই দীর্ঘসূত্রিতা, দ্ব্যর্থতা ও অস্পষ্টতা দূর না করা যায়, তবে SME ব্যবসার প্রসার সম্ভব নয় এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক অগ্রগতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রশাসনিক জটিলতা: বাস্তব অভিজ্ঞতা
SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব: মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা
▸ দপ্তরভিত্তিক দ্বৈত নির্দেশনা
একাধিক SME উদ্যোক্তা অভিযোগ করেছেন যে, ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স পেতে একই নথি তিনবার তিন ভিন্ন দপ্তরে জমা দিতে হয়েছে।
উদাহরণ: এক চর্মপণ্য উৎপাদনকারী সংস্থাকে প্রথমে শিল্প দপ্তর, পরে পৌরসভা এবং শেষে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডে একই নথিপত্র আবার দাখিল করতে হয়।
▸ শারীরিক উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা
তথাকথিত ডিজিটাল পোর্টাল থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ আবেদনকারীকেই সংশ্লিষ্ট অফিসে একাধিকবার যেতে হচ্ছে।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, অফিসার অনুপস্থিত থাকায় ফাইল এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আটকে থাকে ১০–১২ দিন।
➡ ফলাফল: পশ্চিমবঙ্গে SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব একটি কাঠামোগত অসংগতি, যা পরিকল্পিত প্রক্রিয়ার অভাবে দিন দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
নথিপত্র ও অনুমোদন: SME বৃদ্ধির প্রধান প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা
▸ পূর্ববর্তী কর পরিশোধের রেকর্ড চাওয়া
নতুন SME ব্যবসা শুরুর সময় কর দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রায়শই পূর্ববর্তী কর পরিশোধের প্রমাণ চান, যা প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের পক্ষে সরবরাহ করা অসম্ভব।
▸ অদ্ভুত অথচ প্রচলিত বাধা
অনেকক্ষেত্রে আবেদন বাতিল হয় শুধুমাত্র ‘পিনকোড মিলছে না’ বা ‘ঠিকানার বানান ভুল’ এই ধরনের অপ্রাসঙ্গিক কারণে।
➡ ফলাফল: SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা বাড়িয়ে দেয় এই প্রশাসনিক মনোভাব, যেখানে সমাধানের চেয়ে সমস্যা খোঁজাই যেন নিয়ম।
দুর্নীতির আভাস: কথায় না থাকলেও কাজে বর্তমান
▸ ফাইল “সরাতে” অঘোষিত চাপ
একাধিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা দাবি করেছেন যে, অনুমোদন পেতে ঘনিষ্ঠ মাধ্যম খুঁজতে হয়েছে—যা পরোক্ষভাবে ঘুষ সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দেয়।
▸ “ডকুমেন্ট ঠিক আছে, কিন্তু অনুমোদন হবে না”
কিছু SME মালিকের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, নথিপত্র ঠিক থাকলেও অনুমোদন আটকে থাকে কারণ ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখন ব্যস্ত’—এই অজুহাতে।
➡ ফলাফল: SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব শুধু প্রক্রিয়াগত নয়, মাঝে মাঝে ইচ্ছাকৃত।
প্রকল্প অনুযায়ী নীতি প্রয়োগে বৈষম্য
▸ নির্বাচিত প্রকল্পেই দ্রুত পরিষেবা
সরকারি নজর ও মিডিয়ার দৃষ্টি যেসব প্রকল্পে বেশি থাকে, সেখানে SME অনুমোদন দ্রুত হয়।
▸ কম চর্চিত জেলাগুলিতে অবহেলা
উত্তরবঙ্গ বা সুন্দরবনের মতো অঞ্চলে SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব প্রায় দ্বিগুণ সময় নিয়ে থাকে।
➡ ফলাফল: SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় এই নীতি প্রয়োগের অনৈক্য এবং মনোভাবগত বৈষম্য।
অভিযোগ ব্যবস্থার অকার্যকারিতা
▸ গ্রিভান্স পোর্টালের অস্তিত্ব, কার্যকারিতা নেই
পশ্চিমবঙ্গে SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব বিষয়ে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
▸ কোনো ফলো-আপ নেই
একাধিক অভিযোগ ৩০ দিনেও নিষ্পত্তি হয়নি। বরং, অভিযোগের ফলেই অনেক উদ্যোক্তা আবার ‘নজরে’ পড়ে যান।
➡ ফলাফল: SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা কমানোর চেষ্টাই নেই, বরং প্রতিবাদ করলেই বাড়ে প্রশাসনিক জটিলতা।
পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বিলম্ব এখন নিছক একটি ব্যবস্থাগত ত্রুটি নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতির রূপ নিয়েছে যা SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব এবং SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা-কে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যদি নীতিগত স্বচ্ছতা, সময়সীমার বাধ্যবাধকতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতা না আনা যায়, তাহলে এই খাতের সম্ভাবনা শুধুই কাগজে থাকবে।
পশ্চিমবঙ্গে শিল্প বিকাশের সমস্যা: পরিসংখ্যান
বিনিয়োগে হ্রাসমান প্রবণতা
▸ MSME রেজিস্ট্রেশনের হার কমছে
২০১৯-২০ সালে যেখানে পশ্চিমবঙ্গে ১.৮ লাখ নতুন MSME ইউনিট নিবন্ধিত হয়েছিল, ২০২৩-২৪ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ১.২ লাখে।
জাতীয় গড় বৃদ্ধির হার যেখানে ১২%, পশ্চিমবঙ্গে তা মাত্র ৩.5% — যা স্পষ্ট করে যে SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব বিনিয়োগে অনীহার বড় কারণ।
▸ একাধিক জেলায় শূন্য শিল্প বৃদ্ধির হার
পূর্ব মেদিনীপুর, আলিপুরদুয়ার এবং বাঁকুড়ায় গত তিন বছরে SME বৃদ্ধির হার ছিল <1%, যা SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা-র উদ্বেগজনক ইঙ্গিত।
➡ উপসংহার: পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বিলম্ব যদি পরিকল্পিতভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে শিল্পায়ন কেবল পলিসি পেপারে থেকে যাবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে গড় সময় অতিরিক্ত
▸ গড় সময়কাল পশ্চিমবঙ্গে দ্বিগুণ
পশ্চিমবঙ্গে একটি SME ইউনিট স্থাপন ও চালু করতে গড় সময় লাগে 238 দিন, যেখানে জাতীয় গড় মাত্র 122 দিন।
বিশেষতঃ পরিবেশ ছাড়পত্র ও বিদ্যুৎ সংযোগে বিলম্ব — যা পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বিলম্বের সবচেয়ে পরিচিত দিক।
▸ সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা
‘One District One Product’ (ODOP) প্রকল্পের আওতায় অনুমোদিত ৩১ টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র ৯টি প্রকৃত কাজ শুরু করেছে — বাকিগুলো আটকে আছে “প্রসেসে”।
➡ উপসংহার: SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব শুধু ব্যক্তি উদ্যোগ নয়, সরকারি প্রকল্পগুলোকেও স্তব্ধ করে দিচ্ছে।
ব্যাংকিং সহযোগিতার সংকট
▸ অনুমোদনের বিলম্বে ঋণ বাতিল
MSME উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, সরকারি সার্টিফিকেট না থাকায় তাঁদের আবেদন করা ব্যাংক ঋণ বাতিল হয়েছে—যদিও প্রকল্প আগে অনুমোদিত হয়েছিল।
এতে করে ব্যাংকও পিছিয়ে যাচ্ছে—কারণ ফাইনাল অনুমোদন না থাকলে তারাও ‘risk profile’ অনুযায়ী ঋণ দিতে রাজি নয়।
▸ পশ্চিমবঙ্গের ক্রেডিট-ডিপোজিট অনুপাত কম
জাতীয় গড় যেখানে 77%, পশ্চিমবঙ্গে SME খাতে এই অনুপাত 59%। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা stemming from প্রশাসনিক বিলম্ব।
➡ উপসংহার: প্রশাসনিক বিলম্ব কেবল নথিপত্র আটকে রাখে না, বরং অর্থনৈতিক প্রবাহও রুদ্ধ করে।
রপ্তানি ও উৎপাদন হ্রাস
▸ উৎপাদনশীলতা কমছে
পশ্চিমবঙ্গের রপ্তানি-ভিত্তিক SME ইউনিটের সংখ্যা গত তিন বছরে ১৮% কমেছে। প্রধান কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা চিহ্নিত করেছেন দীর্ঘ মেয়াদি সরকারি অনুমোদনের অস্পষ্টতা।
তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০টি রপ্তানি ইউনিটের মধ্যে ৪টি তিন বছরের বেশি সময় ধরে “আংশিক কার্যকর”।
▸ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণে ঘাটতি
পশ্চিমবঙ্গের SME উদ্যোক্তারা দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মেলায় অংশ নিতে পারেন না কারণ রাজ্য সরকারের NOC দিতে বিলম্ব ঘটে।
➡ উপসংহার: পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বিলম্ব শুধু অভ্যন্তরীণ উৎপাদন নয়, আন্তর্জাতিক সংযুক্তিতেও বাধা সৃষ্টি করছে।
প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে রাজ্য
▸ ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস সূচকে নিম্ন স্থান
২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ যেখানে ১০ নম্বরে ছিল, ২০২3 সালে তা নেমে এসেছে ১৮ নম্বরে।
SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব এবং ফলো-আপ ব্যবস্থার দুর্বলতা এই পতনের অন্যতম দায়ী।
▸ প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা এগিয়ে
ওড়িশা এখন SME এক্সপ্রেস অ্যাপের মাধ্যমে অনুমোদন ও পরিষেবা দিচ্ছে গড় ৭২ ঘন্টার মধ্যে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গ এখনও ফাইল পাঠাচ্ছে কুরিয়ারে।
➡ উপসংহার: পশ্চিমবঙ্গে SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা শুধুই অভ্যন্তরীণ নয়; তা রাজ্যের প্রতিযোগিতা শক্তিও খর্ব করছে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বিলম্ব আজ শুধু একটা অব্যবস্থা নয়, বরং একটি পরিসংখ্যানিক সত্য যা রাজ্যের SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব এবং সামগ্রিক SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা-কে টেকসই করে তুলেছে। পরিসংখ্যান কখনো মিথ্যা বলে না—তবে প্রশাসনিক ব্যাখ্যাগুলো প্রায়শই তা এড়িয়ে চলে।
সমাধানের পথ: কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া SME মুক্তি নেই
‘Single Window’ যেন না হয় ‘Single Trap’
▸ বাস্তবসম্মত ও প্রযুক্তিনির্ভর একক প্ল্যাটফর্ম
অনেক SME উদ্যোক্তা অভিযোগ করেন, তথাকথিত Single Window ব্যবস্থা বাস্তবে SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব-এরই নতুন রূপ।
সিস্টেম যদি ম্যানুয়ালি ফাইল ফরোয়ার্ড করে, তাহলে তা প্রযুক্তি নয়—নতুন ধাঁচের জটিলতা মাত্র।
সমাধান: Blockchain ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় approval tracking system চালু করা যেতে পারে, যা ফাইলের অগ্রগতি real-time-এ ট্র্যাক করতে দেবে।
▸ উদাহরণ: গুজরাটের ‘Auto-Approval Mode’
গুজরাটে নির্দিষ্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নো-অবজেকশন সনদ না এলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদিত ধরা হয়।
পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বিলম্ব কমাতে এই মডেল অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
District-Level SME Task Force: বাস্তবায়নের তদারকি জরুরি
▸ স্থানীয় পর্যায়ের দ্রুততা
পশ্চিমবঙ্গে SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা মূলত জেলা প্রশাসনের পর্যায়ে বেশি প্রকট।
জেলা পর্যায়ে স্বাধীন Task Force তৈরি হলে তা approval ও support process তদারকি করতে পারবে।
এতে SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব অনেকটাই হ্রাস পাবে।
▸ জেলা শিল্পকেন্দ্রের আধুনিকীকরণ
বহু জেলা শিল্প কেন্দ্র (DIC) এখনও ফ্যাক্স ও চিঠির মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করে—এই ধারা ২০২৫ সালে একেবারেই অচল।
QR code ভিত্তিক ডিজিটাল ফর্ম submission ও status tracking চালু করা প্রয়োজন।
Policy-Audit এবং Accountability System চালু করা হোক
▸ প্রশাসনিক ‘Dead Zone’ চিহ্নিত করা
কোথায় কতদিন ফাইল আটকে থাকে তার নিরপেক্ষ হিসাব থাকা দরকার।
পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বিলম্ব কোথায় সবচেয়ে প্রকট, সেই অঞ্চলভিত্তিক রিপোর্ট Card চালু করলে, দায় নির্ধারণ সহজ হবে।
▸ ব্যক্তি নয়, পদকে জবাবদিহি করানো
‘Officer-in-Charge’ নয়, ‘Post-in-Charge’ ভিত্তিতে যদি দায় নির্ধারণ হয়, তবে কর্মীদের স্থানান্তর করেও জবাবদিহি এড়ানো যাবে না।
SME ডেটা ব্যাংক: নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতা প্রয়োজন
▸ লাইভ ডেটা দরকার
বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে SME ইউনিটের হালনাগাদ সংখ্যা জানা নেই প্রশাসনের।
ফলে কোন খাতে কী সুবিধা দেওয়া হবে তা যথাযথভাবে নির্ধারণ করা যায় না।
▸ সমাধান: Real-Time SME Dashboard
একটি ওপেন-ডেটা প্ল্যাটফর্ম যা প্রতিটি SME ইউনিটের লাইভ স্টেটাস দেখাবে—এতে প্রশাসনের ভিতরেই স্বচ্ছতা আসবে, এবং SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব-এর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
প্রশাসনিক লাল ফিতের বাইরে বিকল্প অনুমোদন ব্যবস্থা
▸ EPC (Empowered Project Committee) চালু করা
বিশেষত যেসব প্রকল্প ১০০টির বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম, তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের বাইরেও একটি বিকল্প ফাস্ট-ট্র্যাক কমিটি থাকা দরকার।
এই ব্যবস্থা SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে অর্থনৈতিক প্রবাহ তৈরি করতে সহায়ক হবে।
▸ MSME Legal Helpline এবং Fast Track Tribunal
অনেক SME উদ্যোক্তা প্রশাসনিক বিলম্বে পড়ে আইনি জটিলতায় আটকে যান।
বিশেষ Tribunal চালু করে তিন মাসের মধ্যে প্রশাসনিক বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারলে, প্রকল্পের গতি ফেরানো সম্ভব।
পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বিলম্ব কেবল ফাইল আটকে রাখা নয়, এটি হলো একটি কার্যত ‘ডিলে ইকোসিস্টেম’। যতদিন না তার মূল কাঠামোতে প্রযুক্তি, জবাবদিহি এবং স্থানীয় স্তরে ফাস্ট-ট্র্যাক সিদ্ধান্ত গ্রহণ চালু হচ্ছে, ততদিন SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব এবং SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা নিঃসন্দেহে রাজ্যের অর্থনৈতিক স্বপ্নকে রুদ্ধ করে রাখবে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বিলম্ব এখন আর কেবল একটি প্রথাগত সমস্যা নয়, বরং এটি এক ভয়ঙ্কর কাঠামোগত সংকটের রূপ নিয়েছে, যা সরাসরি SME ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসনিক বিলম্ব ও SME বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। উদ্যোগ, পুঁজি ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ শুধু প্রশাসনিক অসাড়তায় থমকে আছে। এখন সময় এসেছে প্রথার বদলে প্রয়োগে জোর দেওয়ার—কারণ পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই বিলম্ব ঘোচানোর দৃষ্টিভঙ্গির উপর।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো