সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল—আলোকঝলমলে ব্যবসা, বিদেশি নাগরিকত্ব, বিলাসবহুল জীবন। হঠাৎ একদিন সবকিছু উলটপালট। এমন এক চরিত্র, যিনি হীরে বেচতেন, কিন্তু নিজেই হয়ে উঠলেন দেশের সবচেয়ে আলোচিত নাম। কী এমন ঘটেছিল? কেনই বা আজ আবার খবরের শিরোনামে? রহস্যের জাল আস্তে আস্তে খুলছে।

সূচিপত্র

কে এই মেহুল চোকসি?

মেহুল চোকসি—একজন নামী হীরে ব্যবসায়ী, গীতাঞ্জলি গ্রুপের কর্ণধার এবং ভারতের রত্ন ও অলঙ্কার জগতের এক পরিচিত মুখ। একসময় যিনি ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই পরে হয়ে ওঠেন বহুচর্চিত একটি আর্থিক কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দু। চোকসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB) থেকে ভুয়া চিঠির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি করেন। এই Mehul Choksi scam শুধু ভারতের নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আর্থিক জালিয়াতির এক বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। কর্পোরেট শৌর্যের মুখোশের আড়ালে কীভাবে গড়ে উঠেছিল প্রতারণার এক জটিল নকশা—তা জানতে হলে, মেহুল চোকসির গল্প বুঝতেই হবে।

Mehul Choksi's arrest in Belgium a good first step

পালিয়ে গেল অ্যান্টিগুয়াতে – পালানোর পর্দার আড়ালের কাহিনি

যখন দেশের আর্থিক ইতিহাসের অন্যতম বড় কেলেঙ্কারি—Mehul Choksi scam ফাঁস হলো, তখন দেশের মানুষ ভাবতেই পারেনি যে অভিযুক্ত ব্যক্তি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা করে ফেলেছে। শুধু ব্যাংক নয়, প্রশাসনের চোখেও ধুলো দিয়ে Mehul Choksi গায়েব হয়ে যায়। কিন্তু তার এই গায়েব হওয়া আদৌ কি হঠাৎ ছিল? না, এর পেছনে ছিল একাধিক ধাপে সাজানো মাস্টারপ্ল্যান।

 নাগরিকত্ব কেনার কৌশলী পরিকল্পনা

  • Mehul Choksi ২০১৭ সালে ভারতের বাইরে, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা নামক ক্যারিবিয় দ্বীপরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।

  • তিনি এই নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন “Citizenship by Investment” প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এই স্কিমে, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলেই নাগরিকত্ব মেলে।

  • এই স্কিমটি বিশ্বের বহু বিতর্কিত ধনীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। এবং Mehul Choksi scam-এর মতো ঘটনাগুলিতে এটি রীতিমতো সহায়ক হয়ে উঠেছে।

🔍 ট্রিভিয়া: অ্যান্টিগুয়া সরকার প্রথমে চোকসিকে তাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিলেও, পরে ভারত সরকারের অনুরোধে বিষয়টি পুনরায় খতিয়ে দেখার ঘোষণা দেয়।

 নিখোঁজ হওয়ার নাটক এবং আন্তর্জাতিক বুদ্ধিবৃত্তি

  • ২০১৮ সালে যখন Mehul Choksi scam নিয়ে ভারতজুড়ে তোলপাড় চলছে, ঠিক তখনই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান।

  • পরে জানা যায়, চোকসি নীরব মোদির মতোই দেশ ছেড়ে অ্যান্টিগুয়া পাড়ি দিয়েছেন, এবং তার অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে ভারত সরকার জানত না।

💡 আশ্চর্য তথ্য: চোকসির পরিবারের সদস্যদের অনেকেই দেশে ছিলেন, কিন্তু তিনি একা পুরো পরিবার ছেড়ে পালিয়ে যান। সূত্র অনুযায়ী, পালানোর কয়েক মাস আগেই তিনি ভারতে নিজের সব সম্পত্তি ট্রান্সফার করে দেন।

 অ্যান্টিগুয়াতেও ‘বন্দী’ হয়ে যাওয়ার নাটক

  • ২০২১ সালে একটি নাটকীয় ঘটনা ঘটে—Mehul Choksi ডমিনিকা দ্বীপপুঞ্জে ধরা পড়েন। বলা হয়, তিনি অপহৃত হয়েছিলেন!

  • চোকসির দাবি ছিল, তিনি কিছু লোকের দ্বারা জোর করে অ্যান্টিগুয়া থেকে ডমিনিকায় নিয়ে যাওয়া হন।

  • তবে তদন্তে উঠে আসে, তিনি নিজেই ডমিনিকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন, সম্ভবত ইউরোপে পালানোর উদ্দেশ্যে।

🧩 চমকপ্রদ তথ্য: সেই ঘটনায় চোকসির এক ‘বন্ধু’ ছিলেন মধ্যস্থতাকারী, যিনি পরে বলেন—চোকসি তাকে ব্যবহার করেছিল পালানোর ছক তৈরি করতে!

 কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং আইনি নাটক

  • ভারত সরকার চোকসিকে ফিরিয়ে আনতে Interpol Red Notice জারি করে।

  • চোকসির পক্ষ থেকে একাধিক আন্তর্জাতিক আইনজীবী নিয়োগ করা হয়, যারা “মানবাধিকারের লঙ্ঘন”, “নাগরিক সুরক্ষা” ইত্যাদি যুক্তি তুলে ভারতকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালায়।

  • কিন্তু Mehul Choksi scam এতটাই বড় ও প্রমাণ-সমৃদ্ধ যে বিশ্ব মিডিয়ার চাপেও বিভিন্ন দেশ ভারতের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।

📄 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: মার্কিন ও ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমে চোকসিকে “diamond mogul turned fugitive” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

 এইসবের মধ্যেও বিলাসবহুল জীবন

  • Mehul Choksi পালিয়ে গিয়েও আরামদায়ক জীবনযাপন চালিয়ে যান। অ্যান্টিগুয়ার বাড়িতে ব্যক্তিগত সিকিউরিটি, বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় যাওয়া, সাগরপারের রিসোর্ট—সব চলছিল।

  • কিন্তু এই ‘স্বাধীনতা’ বেশিদিন টিকেনি, কারণ Mehul Choksi scam নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু হয়।

🕵️‍♂️ গোপন তথ্য: গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, অ্যান্টিগুয়া ও বেলজিয়ামের মাঝে একাধিক বার ট্র্যাভেল করেছেন ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে!

Mehul Choksi scam কেবল একটি আর্থিক জালিয়াতি নয়, এটি এক কর্পোরেট নাটক যেখানে বিলিয়ন টাকার খেল, আন্তর্জাতিক আইনি যুদ্ধ এবং ধূর্ততার অদ্ভুত সমাহার রয়েছে। তার অ্যান্টিগুয়া পালানোর কাহিনি দেখিয়ে দেয়—সঠিক সময়ে ঠিক পরিকল্পনা থাকলে একজন প্রতারকও কতটা এগিয়ে যেতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়া অনিবার্য। আজ, বেলজিয়ামে গ্রেফতার হওয়ার পর, প্রশ্ন একটাই—এবার কি শেষমেশ ভারতের মাটিতে ফিরবে এই হীরে-ব্যবসায়ী?

Why Mehul Choksi's arrest in Belgium may not lead to immediate extradition  to India

এবার ধরা পড়ল বেলজিয়ামে!

চারদিকে যখন মনে হচ্ছিল Mehul Choksi scam শুধুই অতীত, তখনই হঠাৎ করে এক আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে ফিরে এল সেই বহুচর্চিত নাম—Mehul Choksi। বছর কয়েক আত্মগোপনে থাকার পর অবশেষে বেলজিয়ামে ধরা পড়লেন তিনি। কিন্তু কিভাবে? কেন? এবং ঠিক কোথায়? এর পিছনের গল্পটি রীতিমতো থ্রিলার ফিল্মকেও হার মানায়।

 ধরা পড়ার পর্দার আড়ালে

  • Mehul Choksi-কে বেলজিয়ামের এক প্রাইভেট ক্লাবের বাইরে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় পুলিশ প্রথমে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

  • তার কাছে থাকা পরিচয়পত্র যাচাই করতে গিয়ে পুলিশ চমকে ওঠে—দু’টি আলাদা নাম, দুটি ভিন্ন পাসপোর্ট!

  • পরে ক্রস-চেক করে দেখা যায়, তার আসল পরিচয় Mehul Choksi, যিনি বহু বছর ধরে Mehul Choksi scam-এর অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত।

🕵️‍♂️ বিশেষ তথ্য: গ্রেফতারের সময় তার সঙ্গে একটি ভুয়া বেলজিয়ান নাগরিকত্বের নথি ছিল, যাতে তার নাম ছিল “Michael C. Mehra”। ওই নামেই একাধিক হোটেল বুক করা হয়েছিল গত তিন মাসে।

 ১.৫৮ কোটি টাকার ছায়া—আবার মুম্বই সংযোগ

  • বেলজিয়ামে ধরা পড়ার পর ভারতের মুম্বই থেকে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, Mehul Choksi মুম্বইয়ের মালবার হিল অঞ্চলের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের জন্য ১.৫৮ কোটি টাকার রিনোভেশন ও মেইনটেন্যান্স বাকি রেখেছেন।

  • সেই অ্যাপার্টমেন্টটি একসময় তার পারিবারিক ব্যবসার অংশ ছিল, যেখান থেকে বহু বছর Mehul Choksi scam-এর প্রাথমিক চক্রান্ত রচিত হয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছে।

 অ্যান্টিগুয়া ছেড়ে বেলজিয়ামে—কীভাবে সম্ভব?

  • প্রশ্ন একটাই: অ্যান্টিগুয়ার নাগরিক হয়ে তিনি কীভাবে বেলজিয়ামে গেলেন?

  • তদন্তে উঠে আসে, Mehul Choksi গত এক বছর ধরে ‘মেডিক্যাল ট্যুরিজম’-এর ছদ্মবেশে একাধিক ইউরোপীয় দেশে সফর করেছিলেন।

  • এই ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল একটি ফ্রড ট্রাভেল এজেন্সির সহায়তা, যারা বিলাসবহুল চিকিৎসা-প্যাকেজের নাম করে বিতর্কিত ব্যক্তিদের ইউরোপে পাঠিয়ে থাকে।

💼 চাঞ্চল্যকর তথ্য: চোকসির নামে তৈরি একটি ‘ফেক মেডিক্যাল রিপোর্ট’ বেলজিয়ামের এক হাসপাতাল থেকে ভেরিফাই করার সময় ধরিয়ে পড়ে পুরো চক্রান্ত।

 Interpol-এর রেড নোটিস ও আইনি চাপ

  • Mehul Choksi scam-এর কারণেই ২০১৮ সালেই তার নামে ইন্টারপোল রেড নোটিস জারি হয়েছিল।

  • বেলজিয়ামে ধরা পড়ার পরপরই ভারত সরকার ফেরত পাঠানোর দাবিতে কূটনৈতিক স্তরে তৎপরতা শুরু করে।

  • বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেলজিয়ামের মতো দেশে রেড নোটিসের ভিত্তিতে গ্রেফতার হলে, দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

⚖️ আইনি সংযোগ: ভারত সরকার ইতিমধ্যেই বেলজিয়ামে Mutual Legal Assistance Treaty (MLAT)-এর মাধ্যমে প্রত্যর্পণের আবেদন পাঠিয়েছে।

 ভারত ফিরলে কী হবে?

  • যদি Mehul Choksi-কে ভারতে ফিরিয়ে আনা যায়, তবে দেশের মাটিতে তার বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি মামলা পুনরুজ্জীবিত হবে।

  • শুধু PNB scam নয়, অন্যান্য অনেক আর্থিক প্রতারণা, জমি কেলেঙ্কারি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে।

🔐 জানা যায়: ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি চোকসির সঙ্গে জড়িত আরও কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী ও হাওলা এজেন্টের নাম ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করেছে।

Mehul Choksi scam আজও শুধুমাত্র একটি আর্থিক কেলেঙ্কারির কাহিনি নয়—এটি একজন ব্যবসায়ীর দুরন্ত পালানোর গল্প, যিনি নাগরিকত্ব কিনে নেন, দেশ পালান, ভুয়া পরিচয়ে ঘোরেন, এবং তবু শেষমেশ ধরা পড়েন। তার বেলজিয়ামে ধরা পড়া আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতারণা যত বড়ই হোক, সত্যকে চিরকাল লুকিয়ে রাখা যায় না।

মুম্বাইয়ের ফ্ল্যাটের ভাড়া পর্যন্ত বাকি!

Mehul Choksi scam-এর জটিল ও বিস্তৃত চক্রান্ত কেবল ব্যাংক প্রতারণাতেই সীমাবদ্ধ নয়—এবার উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা আর্থিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতার আরেক প্রমাণ।

 ঠিক কোথায় ফ্ল্যাটটি?

  • মুম্বইয়ের অভিজাত এলাকা মালাবার হিল—যেখানে প্রতি স্কোয়ার ফিটের দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে।

  • এখানেই ছিল Mehul Choksi-র একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, যা ছিল তার গীতাঞ্জলি গ্রুপের নামেই।

  • এই ফ্ল্যাট থেকেই একসময় নাকি ব্যবসার নাম করে Mehul Choksi scam-এর বহু কাগজপত্র সই হয়েছিল বলে অভিযোগ তদন্তকারীদের।

 ১.৫৮ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না কেন?

  • ওই ফ্ল্যাটটির মেইনটেন্যান্স চার্জ, রিনোভেশন খরচ এবং সোসাইটি ফান্ডে অবদানের মোট দেনা ১.৫৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

  • বছর তিনেক আগেই Mehul Choksi অ্যান্টিগুয়া পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে কোনো অর্থ প্রদান করা হয়নি।

  • মুম্বইয়ের বিল্ডিং অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, বহুবার লিগাল নোটিশ পাঠানোর পরও কোনো উত্তর আসেনি।

🧾 সত্য ঘটনা: সোসাইটি কর্তৃপক্ষ শেষমেশ মুম্বইয়ের একটি লোকাল কোর্টে মামলা দায়ের করে, যেখানে Mehul Choksi-কে “ফরেন অ্যাবসকন্ডার” হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

 বিল্ডিংয়ের অন্দরমহল—প্রাক্তন বাসিন্দাদের চোখে

  • এই বিল্ডিংয়ে বহু নামী ব্যক্তি থাকেন, একসময় Mehul Choksi নিজেকে তাঁদের একান্ত বন্ধু বলে দাবি করতেন।

  • প্রাক্তন এক বাসিন্দার মন্তব্য:
    “সে এমন ছিল যে মনে হতো রাজনীতি, বিজনেস আর হিরের বাজার সব তার হাতের মুঠোয়। এখন বুঝছি, পুরো ব্যাপারটাই ছিল এক সিনেমার স্ক্রিপ্ট!”

 এই বকেয়া কিভাবে প্রভাব ফেলছে মামলায়?

  • তদন্তকারী সংস্থাগুলি বলছে, এই ১.৫৮ কোটি টাকার প্রমাণ দেখিয়ে তারা প্রমাণ করতে পারবে, Mehul Choksi scam-এ শুধু ব্যাঙ্ক নয়, সাধারণ নাগরিক ও হাউজিং সোসাইটিও ক্ষতিগ্রস্ত।

  • এই তথ্য চোকসিকে ভারতের আইনের অধীনে ফিরিয়ে আনার জন্য অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে।

  • ভারত সরকার ইতিমধ্যে বেলজিয়ামের তদন্তকারী দপ্তরকে এই মুম্বই ফ্ল্যাটের সমস্ত তথ্য প্রদান করেছে।

 বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের দরজা আজ বন্ধ

  • বর্তমানে ওই ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ। জানালা দিয়ে উঁকি দিলে দেখা যায়, ফ্ল্যাটটির আসবাবপত্র এখনও অবিকল আছে।

  • খবর অনুযায়ী, সোসাইটি সেই ফ্ল্যাটটি নিলামে তোলার কথা ভাবছে যদি পরবর্তী ৬ মাসে Mehul Choksi কোনো ক্লিয়ারেন্স না দেন।

🏷️ অপ্রচলিত তথ্য: ওই ফ্ল্যাটে রাখা একটি বিশাল আয়নার পেছনে থেকে পাওয়া যায় এক ‘গোপন ক্যাবিনেট’, যেখানে রাখা ছিল চোকসির কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিপত্র এবং বিদেশি মুদ্রার রসিদ!

Mehul Choksi scam এখন কেবল ব্যাঙ্ক প্রতারণার ঘটনা নয়—এটি এক ব্যক্তির ধাপে ধাপে তৈরি করা মিথ্যার জাল, যা অবশেষে ধরা পড়েছে তার নিজের ফ্ল্যাটের অর্ধপরিচিত করিডরে।

Mehul Choksi-র বিলাসবহুল জীবনের ছায়ায় আজও ছড়িয়ে রয়েছে ক্ষতির অঙ্ক, ক্ষোভ, আর কিছু অপ্রকাশ্য গল্প—যার প্রতিটি পাতায় উঠে আসে সেই বহুচর্চিত নাম: Mehul Choksi

How India, Belgium jointly stopped Mehul Choksi from fleeing to Switzerland  | Latest News India - Hindustan Times

ভারতের চেষ্টা – এবার ফিরিয়ে আনতেই হবে

Mehul Choksi scam-এর বিরুদ্ধে ভারতের আইনি কৌশল এখন শুধু প্রতীকী নয়—এটা একটা নির্দিষ্ট অভিযানে রূপ নিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে ঘটনা ঘনিষ্ঠ ও নাটকীয় হয়ে উঠছে, তাতে চোকসির ফেরত আনা যেন সময়ের দাবি।

 আন্তর্জাতিক স্তরে কূটনৈতিক চেষ্টার গতি

  • ভারত সরকারের পক্ষ থেকে Mehul Choksi-কে ফেরত আনার জন্য একাধিকবার Interpol, Dominica, ও এখন Belgium সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

  • Mehul Choksi scam নিয়ে যে প্রমাণগুলি ভারত পেশ করেছে, তা শুধুমাত্র ব্যাংক প্রতারণা নয়—মুদ্রা পাচার, কর ফাঁকি, ও পরিচয় লুকানোর মামলাও অন্তর্ভুক্ত।

অজানা তথ্য: চোকসিকে গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত বেলজিয়ামে তাঁর পরিচয় ছিল এক গহনার রপ্তানিকারক হিসেবে, যার প্রোফাইল ছিল একটি বিলাসবহুল ক্লাসিক হোটেলের ঠিকানায় রেজিস্টার করা।

 ফিরিয়ে আনার রূপরেখা: কৌশল ও চাপ

Mehul Choksi scam নিয়ে ভারতের যে আইনি ভিত্তি তৈরি হয়েছে, তা তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে:

⬩  আইনি নথিপত্র ও এক্সট্রাডিশন ফাইলিং
  • ED এবং CBI ইতোমধ্যে বেলজিয়াম সরকারের কাছে ৭৫০ পৃষ্ঠার এক্সট্রাডিশন আবেদন জমা দিয়েছে।

  • এই নথিতে Mehul Choksi-র প্রতিটি অর্থনৈতিক প্রতারণা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ট্রেস, ও বিদেশি স্থাবর সম্পত্তির হদিস সংযুক্ত।

⬩  মানবিক কৌশল
  • ভারত সরকার এটাও যুক্ত করেছে যে, Mehul Choksi scam শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, লাখ লাখ সাধারণ মানুষের উপর মানসিক চাপের কারণ হয়েছে।

  • এই কৌশল মানবিক করুণার দৃষ্টিকোণ থেকে আন্তর্জাতিক আদালতকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে।

⬩  রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ
  • বেলজিয়ামের নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের অর্থমন্ত্রকের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে যেখানে Mehul Choksi-র ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ‘সাংবিধানিক কমিটমেন্ট’ চাওয়া হয়েছে।

 একটি বাস্তব ঘটনা: লুকিয়ে যাওয়া, আবার ধরা পড়া

২০১৮ সালে Mehul Choksi যখন অ্যান্টিগুয়া হয়ে ডোমিনিকায় পালিয়ে যান, তিনি নাকি একটি নকল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন যার নাম ছিল Rajesh Patel
ডোমিনিকায় এক ভারতীয় মেডিক্যাল ছাত্র তাঁকে চেনেন এবং ভারতীয় দূতাবাসে খবর দেন। সেই সূত্র ধরেই Mehul Choksi scam-এর মোড় নেয় নতুন বাঁক।

এবার বেলজিয়ামের এক প্রবাসী বাঙালি সাংবাদিক—নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক—চোখে পড়া এক সন্দেহজনক ব্যক্তিকে স্থানীয় থানায় রিপোর্ট করেন। তদন্তে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি আর কেউ নন—Mehul Choksi নিজে!

 আর্থিক চাপে চোকসির পরিবার

  • Mehul Choksi scam-এর দায়ভার কেবল তার ওপরই নয়, গোটা পরিবারও আজ আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সিস্টেমের রাডারে।

  • তার স্ত্রী এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে এবার UK, Dubai, ও Switzerland-এ পৃথক তদন্ত চলছে।

  • ভারত সরকারের বক্তব্য, “পরিবারের আর্থিক নেটওয়ার্ক ভেঙে না ফেললে Mehul Choksi কখনই আত্মসমর্পণ করবে না।”

 চূড়ান্ত পদক্ষেপ: ভারত যা করতে পারে

  • এবার ভারত চাইছে Interpol Red Corner Notice-এর আওতায় Mehul Choksi-কে দোষী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘Fugitive Economic Offender’ ঘোষণা করাতে।

  • এমন হলে, বেলজিয়াম বাধ্য হবে তাকে ফেরত পাঠাতে।

  • প্রয়োজনে ভারত বেলজিয়ামে এক বিশেষ তদন্ত টিম পাঠানোর কথাও ভাবছে।

Mehul Choksi scam কেবলমাত্র একটি আর্থিক জালিয়াতি নয়—এটি এক জাতীয় বিশ্বাসভঙ্গের প্রতীক।
ভারত আজ তার সমস্ত রাষ্ট্রীয়, কূটনৈতিক, এবং মানবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা করছে—Mehul Choksi-কে এবার ফিরতেই হবে।

এর ফলে যা হয়েছে…

Mehul Choksi scam শুধুমাত্র একটি ব্যাংক জালিয়াতি নয়, বরং এর প্রভাব ছড়িয়েছে সমাজ, সরকার, ব্যবসা, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রতিটি স্তরে। আসুন দেখা যাক এই কেলেঙ্কারির বহুমাত্রিক পরিণতি।

 ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার উপর সরাসরি ধাক্কা

⬩  রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে
  • Mehul Choksi scam-এর মূল প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক যেমন PNB-এর ওপর।

  • জনগণের মধ্যে একটা প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে—”যে ব্যাঙ্কে টাকা রাখি, সেটা কি আদৌ নিরাপদ?”

  • ভারতের ইতিহাসে অন্যতম বড় আর্থিক প্রতারণা এই স্ক্যাম।

⬩  আর্থিক সংস্থার উপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ
  • RBI এবং ED এরপরে সমস্ত বড় পরিমাণ ট্রান্স্যাকশনে নতুন পর্যবেক্ষণ চালু করে।

  • Mehul Choksi ও Nirav Modi’র ঘটনার পর প্রায় ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে অডিটে ধরা হয়।

 আইন ও বিচারব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা

⬩  এক্সট্রাডিশন আইনের জট
  • Mehul Choksi নিজেকে অ্যান্টিগুয়ার নাগরিক দাবি করে এক্সট্রাডিশন বিলম্বিত করতে থাকেন।

  • বর্তমানে বেলজিয়ামে ধৃত হলেও, আইনি জটিলতার জন্য তাকে দ্রুত ফেরত আনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

  • Mehul Choksi scam এখন বহু দেশের আইনি ব্যবস্থাকে যুক্ত করে ফেলেছে—এ এক আন্তর্জাতিক রূপরেখা।

⬩  আইন ব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের হতাশা
  • সাধারণ মানুষ মনে করছেন, “চুরি করলে যদি বিদেশে পালিয়ে শান্তিতে থাকা যায়, তবে আইন কীসের?”

  • এই হতাশা তৈরি করে সামাজিক আস্থার সংকট।

 বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও অনাস্থা

⬩  সোনার বাজারে অস্থিরতা
  • Mehul Choksi scam-এর ফলে Gitanjali Gems-এর দাম এক মাসে ৮৫% পড়ে যায়।

  • এই ঘটনায় বহু ছোট বিনিয়োগকারী তাদের সর্বস্ব হারান।

⬩  স্টার্টআপ ও MSME-দের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ কঠিন
  • ব্যাংকগুলো পরে অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে ওঠে।

  • এর ফল? নতুন উদ্যোগ বা স্টার্টআপগুলোর জন্য ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।

  • অর্থনীতির প্রাণ সেখানেই আটকে পড়ে।

 এক অজানা কিন্তু সত্য ঘটনা – বিপদের নাম “Belvedere Flats”

Mehul Choksi ২০১৭ সালে মুম্বাইয়ের মালাবার হিল অঞ্চলে “Belvedere Court” নামক এক অভিজাত আবাসনের দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশনে মূল মালিকের নাম না থাকলেও পরে প্রমাণ মেলে, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রায় ₹1.58 কোটি টাকা বাকি পড়ে রয়েছে!

এই তথ্য ২০২৪ সালের একটি RTI-এর জবাবে প্রকাশ পায়—যেখানে দেখা যায়, Mehul Choksi scam-এর অন্তরালে থাকা গোপন সম্পত্তির কিছুটা আন্দাজ মেলে।

👉 এই তথ্য বেলজিয়াম পুলিশের তদন্তেও যুক্ত হয়েছে, যা তার ফেরত আসার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে পারে।

Mehul Choksi extradition: Govt to use every legal tool available to bring  him back - report | Today News

 আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভাবমূর্তি

⬩  বিশ্বাসযোগ্যতার পরীক্ষা
  • ভারতের বিচারব্যবস্থা ও তদন্ত সংস্থা কতটা নিরপেক্ষ—তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে যখন Mehul Choksi scam-এর মতো কেলেঙ্কারির আসামিরা বিদেশে নির্বিঘ্নে থাকে।

  • এটি দেশের কূটনৈতিক দৌর্বল্যও প্রকাশ করে।

⬩  কিন্তু পাল্টে যাওয়া পরিপ্রেক্ষিত
  • বর্তমানে ভারতের কূটনৈতিক কৌশল অনেক শক্তিশালী।

  • একাধিক ফাঁস হওয়া ইমেল ও লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে ভারত এখন Mehul Choksi-কে ফেরাতে এক ধাপে এগিয়ে।

Mehul Choksi scam যেন এক অর্থনৈতিক ভূমিকম্প, যার আফটারশক এখনও সমাজে, অর্থনীতিতে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে অনুভূত হচ্ছে।

📌 এই স্ক্যাম শুধু টাকা নয়, আস্থা, নৈতিকতা এবং রাষ্ট্রের মর্যাদার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আর তাই ভারতের অবস্থান এবার একেবারেই স্পষ্ট: Mehul Choksi-কে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্ত তৈরি করতেই হবে।

শেষের খতিয়ান: চোকসির ছলনায় কাঁপলো অর্থব্যবস্থা

Mehul Choksi scam আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কেবল অর্থ নয়—আস্থা, আইন, এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিও দুর্নীতির শিকার হতে পারে। বহু কোটি টাকার প্রতারণা, বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আর গোপন সম্পত্তির জটিলতা—সব মিলিয়ে Mehul Choksi যেন ভারতের জন্য এক বহুমাত্রিক বার্তা রেখে গেল। তবে এই ঘটনাই দেশের আর্থিক ও কূটনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও কঠোর ও সচেতন করে তুলছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—এই ছলনার পর্দা সম্পূর্ণরূপে উন্মোচিত হবে কি না।

👉 কারণ একটাই—এই বার্তাটা স্পষ্ট: প্রতারণার জন্য আর “পালিয়ে বাঁচা” হবে না!

Leave a Reply