কলকাতার ব্যস্ত ট্র্যাফিকের মাঝে এক নীরব সমস্যা কি ক্রমে তীব্রতর হয়ে উঠছে? কিছু অদ্ভুত আচরণ, কিছু অশ্রুত অভিযোগ আর অস্পষ্ট অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে এক অস্বস্তিকর বাস্তবতা ধীরে ধীরে চোখে পড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি সব ঠিকঠাক চলছে রাস্তায়?

আপনি কি জানেন, কলকাতায় মহিলা গাড়িচালকদের প্রতিদিনই নানা রকম হয়রানি ও কটুক্তির মুখোমুখি হতে হয়? হ্যাঁ, এই শহরে রাস্তায় বের হওয়া মানেই যেন এক নতুন যুদ্ধ। বিশেষ করে মহিলা ড্রাইভারদের জন্য, যারা প্রতিদিন ট্র্যাফিকের জট, পুরুষ চালকদের বাজে মন্তব্য, এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালান।

সূচিপত্র

মহিলা গাড়িচালকদের প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ

🔍 ট্রাফিক সিগনালে লুকানো ‘কটুক্তি-বোমা’

  • কলকাতার ট্র্যাফিকে মহিলা গাড়িচালকদের সমস্যা শুরু হয় প্রায় প্রতিটি সিগনালে।

  • বাইক, অটো বা প্রাইভেট গাড়ি—সবখানেই কিছু পুরুষ চালকদের বাজে ব্যবহার যেন নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা।

  • “ম্যাডাম, গাড়ি চালান ঠিকঠাক!”, “গাড়ি চালানোর আগে রান্নাটা শিখুন!”—এই ধরনের রাস্তায় মহিলা চালকদের প্রতি কটুক্তি যেন কলকাতার ট্র্যাডিশন হয়ে গেছে।

🧾 বাস্তব কাহিনি:
শ্রেয়া সেন, সাউথ কলকাতার এক ইঞ্জিনিয়ার, অফিস যাওয়ার পথে গড়িয়াহাট মোড়ে সিগনালে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ পিছনের বাইক থেকে এক যুবক বলে ওঠে, “এই মহিলা ড্রাইভারদের জন্যই ট্রাফিক জ্যাম হয়।”

শ্রেয়া প্রতিবাদ করলে, তার গাড়ির পাশে এসে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় তারা, জানলা দিয়ে খারাপ মন্তব্য ছুড়ে দেয়।
পরদিন থেকে সে আর গাড়ি নিয়ে বেরোয় না—এই কলকাতার রাস্তায় মহিলা চালকদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ করে।

🚦  ড্রাইভিং লেন নয়, যেন মানসিক যুদ্ধের ময়দান

  • প্রতিটি মোড়ে, লেন বদলের সময় বা রাস্তায় U-turn নিতে গেলে, মহিলা ড্রাইভারদের যৌন হয়রানি যেন রুটিন ব্যাপার।

  • যারা মহিলা গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে রাস্তার কটুক্তি ও বাজে মন্তব্য করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব।

🧠 জানা অজানা তথ্য:

  • ২০২৩ সালের এক RTI রিপোর্টে প্রকাশ পায়, কলকাতায় মহিলা চালকদের প্রতি হয়রানির লিখিত অভিযোগের সংখ্যা ৫০টিরও কম, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগের সংখ্যা ৫০০-রও বেশি!

👮‍♀️  পুলিশি পদক্ষেপ আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়

  • মহিলা চালকদের হয়রানি রোধে পুলিশি পদক্ষেপ হিসেবে কয়েকটি হেল্পলাইন চালু হলেও, বাস্তব প্রয়োগ দুর্বল।

  • অনেক ক্ষেত্রে মহিলা চালকরা অভিযোগ জানাতে দ্বিধা করেন—সমাজের কটাক্ষ, পুলিশের অবহেলা এবং বিচারহীনতা এর কারণ।

📌 কলকাতা পুলিশের ভূমিকা মহিলা সুরক্ষায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে বহুবার।

🧩  সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি – এখনো বদলায়নি

  • “মেয়েরা গাড়ি চালাবে কেন?” — এই প্রশ্ন এখনও অনেকের মুখে।

  • গাড়ি চালানো মহিলাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো রক্ষণশীল এবং ব্যঙ্গাত্মক।

  • অনেক পরিবারই চায় না তাদের মেয়ে বা বউ বাইরে গাড়ি চালাক—যেন এটা “অপ্রাকৃতিক”।

🗣️ একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে মহিলা ড্রাইভারদের নিয়ে বানানো মিম আজও ঘুরছে।
নারী ড্রাইভারদের বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রতিদিন প্রমাণ করে, কলকাতা কি আদৌ মহিলা চালকদের জন্য নিরাপদ শহর?

❗  ভবিষ্যতের জন্য করণীয় কী?

🔹 মহিলা সুরক্ষা আইন ও ট্র্যাফিক নিয়ম কড়াভাবে প্রয়োগ করা দরকার।
🔹 কলকাতায় মহিলা চালকদের প্রতি পুরুষ চালকদের বাজে ব্যবহার আটকাতে সচেতনতা জরুরি।
🔹 স্কুল-কলেজে ট্রাফিক রুল ও জেন্ডার সেন্সিটিভিটি নিয়ে ক্লাস চালু হওয়া উচিত।

Dada na, didi… a day in the life of Uber's only female cab driver in Kolkata  | Kolkata News - The Indian Express

✅ সারাংশ

চ্যালেঞ্জসমস্যাপ্রভাব
ট্রাফিক সিগনালে কটুক্তিআত্মবিশ্বাস হ্রাসগাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকা
সামাজিক ব্যঙ্গমানসিক চাপগাড়িচালনার প্রতি অনীহা
পুলিশের নিস্ক্রিয়তাঅভিযোগ না জানানোঅপরাধ বাড়া

এই পুরো বিষয়টাই বারবার মনে করিয়ে দেয়, “কলকাতায় মহিলা গাড়িচালকদের হয়রানি” কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এক দৈনন্দিন বাস্তবতা।
এখন প্রশ্ন একটাই — “মহিলা চালকদের জন্য নিরাপদ শহর কি কলকাতা?”

পুরুষ চালকদের বাজে ব্যবহার: নিঃশব্দ সহিংসতা, চোখের সামনে

🧠 আচরণ না, এটা একপ্রকার দমননীতি

  • কলকাতার রাস্তায় মহিলা চালকদের প্রতি পুরুষ চালকদের বাজে ব্যবহার অনেক সময় সরাসরি গালিগালাজ নয়—
    এটা হয় “সিগনালে ইচ্ছে করে হর্ন বাজানো,”
    “ইচ্ছাকৃতভাবে পাশে এসে চটুল মন্তব্য করা,”
    কিংবা “গাড়ির খুব কাছে গিয়ে ব্রেক করা”

📌 এসব আচরণ মুখে বললে ‘তুচ্ছ’, কিন্তু প্রতিদিন মনের ওপর তৈরি করে চাপ।

📊  তথ্য বলছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ চালকরাই পুরুষ — এবং তারা আধিপত্য দেখান

🚦 কলকাতায় মোট রেজিস্টার্ড গাড়িচালক সংখ্যা (2023-এর তথ্য):

চালকদের ধরনসংখ্যাশতাংশ
পুরুষ গাড়িচালক৮.৯ লাখ৯১%
মহিলা গাড়িচালক৮৫,০০০৯%

➡️ এই অসম সংখ্যা থেকেই স্পষ্ট:
কলকাতায় মহিলা গাড়িচালকদের হয়রানি অনেকটা ‘সংখ্যার আধিপত্য’ থেকেই উৎস।

👀 অসাধারণ তথ্য:

  • বেশ কিছু পুরুষ চালক বিশ্বাস করেন, “মহিলা চালকদের ট্র্যাফিক বোঝার ক্ষমতা কম।

  • এক ইন্টারভিউতে এক পুরুষ অটোচালক বলেন:
    “ম্যাডামরা বেশি ট্র্যাফিক ব্লক করেন, তাই আমরা পাশে গিয়ে ‘উপদেশ’ দিই।”

🎯 এই ‘উপদেশ’ই অনেক সময় হয় রাস্তায় মহিলা চালকদের প্রতি কটুক্তি

🧾 বাস্তব গল্প: “নিমচি মোড়ের দুপুরবেলা”

মধুমিতা ঘোষ, যাদবপুরের একজন সিঙ্গল মাদার।
প্রতিদিন স্কুলে ছেলেকে পৌঁছে দিতে গাড়ি চালান।
একদিন নিমচি মোড়ে বাইকে বসে থাকা দুই যুবক তাঁর গাড়ির পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে—
“বাচ্চা নিয়ে গাড়ি চালাতে বেরিয়ে পড়েছেন! বাচ্চার থেকে আগে ক্লাস নিন।”
তিনি চুপ করে যান। কারণ মহিলা চালকদের হয়রানি রোধে পুলিশি পদক্ষেপ সেই মুহূর্তে ছিল অনুপস্থিত।

No respect for rules, other drivers, especially women: Road rage is common  in Kolkata | Bengali Movie News - The Times of India

পুরুষ চালকদের মধ্যে এই আচরণ আসে কোথা থেকে? — এক মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

কলকাতায় মহিলা গাড়িচালকদের হয়রানি কেবল রাস্তার ঘটনা নয়, এটা বহুদিনের গঠনমূলক সামাজিক চিন্তার ফসল। নিচের কয়েকটি সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে এর উৎস বোঝা যায়:

🔄 প্রচলিত লিঙ্গ-চেতনার মিথ

  • ছোটবেলা থেকেই অনেক ছেলেকে শেখানো হয় —
    “গাড়ি, গিয়ার, স্টিয়ারিং—এসব ছেলেদের জিনিস।”

  • তাই যখন একজন মহিলা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রাস্তা দখল করেন, তখন তা তাদের ‘অধিকার-ভঙ্গ’-এর মতো মনে হয়।

📌 এই মনোভাব থেকেই জন্ম নেয়— “সেই মহিলা নিশ্চয় চালাতে জানেন না” ধরণের মন্তব্য।

 💼 পেশাগত প্রতিযোগিতার অসহিষ্ণুতা

  • যখন মহিলারা পেশাদার ড্রাইভার হন— ক্যাব, স্কুলভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স বা অ্যাপ-চালিত ট্যাক্সি চালান, তখন পুরুষ চালকদের একাংশ সেটা দেখে মনে করেন—
    “আমাদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে!”

🔍 এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে মহিলা চালকদের প্রতি পুরুষ চালকদের বাজে ব্যবহার হয়ে ওঠে হিংসাত্মক প্রতিক্রিয়া।

🔇 সামাজিক চুপচাপ বৈষম্য – ‘নিরব অনুমোদন’

  • অনেক সময় পরিবার, সমাজ, এমনকি অন্য চালকরাও এই আচরণ দেখে চুপ থাকেন।
    এর ফলে রাস্তায় মহিলা চালকদের প্রতি কটুক্তি যেন একপ্রকার “চুপচাপ বৈধতা” পেয়ে যায়।

📌 যেখানে প্রতিবাদ নেই, সেখানেই অপমান চর্চার রেওয়াজ শুরু হয়।

 📉 আইনি ভয়ের অভাব এবং ব্যবস্থার শৈথিল্য

  • অনেক পুরুষ চালক জানেন, রাস্তায় কেউ কিছু বললে তার জন্য সাধারণত শাস্তি হয় না।
    আবার মহিলা চালকদের হয়রানি রোধে পুলিশি পদক্ষেপ অনেক সময় তাৎক্ষণিক নয়।

📌 ফলে তারা বুঝে যান— বাজে ব্যবহার করেও পার পেয়ে যাওয়া যায়।

 🎭 “মজার ছলে অপমান” — এক ধরণের সামাজিক স্বীকৃত উপদ্রব

  • রাস্তার কটুক্তি অনেক সময় “মজা” বা “স্মার্টনেস” হিসেবে উপস্থাপিত হয়।
    বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে এই মানসিকতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

➡️ কিন্তু বাস্তবে, এই ‘মজা’ই ধীরে ধীরে পরিণত হয় কলকাতার রাস্তায় মহিলা চালকদের নিরাপত্তা সংকটে।

এই আচরণের শিকড় একমাত্র রাস্তায় নয়—
এটা গেঁথে আছে সমাজের মানসিক কাঠামো, চোখ রাঙানো সংস্কার, এবং প্রশাসনিক অবহেলা-র ভেতরে।

❝শুধু আইন নয়, মানসিকতারও সংস্কার দরকার— না হলে মহিলা গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে রাস্তার কটুক্তি ও বাজে মন্তব্য চলতেই থাকবে।❞

🛑 ব্যস্ত রাস্তায় মহিলাদের অসুবিধা — শব্দের আঘাত, দৃষ্টির শূল, আর নীরব শঙ্কা

অদৃশ্য সমস্যা, দৃশ্যমান লাঞ্ছনা

কলকাতার ট্র্যাফিকে মহিলা গাড়িচালকদের সমস্যা শুরু হয় সিগনালেই—

  • প্রতিদিন, একঘেয়ে হর্ন, ইচ্ছাকৃত ওভারটেক, আর ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে মন্তব্যের খোঁচা।

  • “এত ধীরে চললে চলবে কীভাবে?” — কথাটা যেন মন্ত্র।

📌 অথচ আপনি জানেন কি?
কলকাতায় মহিলা গাড়িচালকদের হয়রানি নিয়ে পুলিশে রিপোর্ট করা হয় গড়ে প্রতি ১০০ জনে ১ জনের ক্ষেত্রে মাত্র!
বাকি ৯৯ জন কি করেন? নীরব থাকেন।

ট্রাফিক সিগনালে নারীর গাড়ি মানেই লক্ষ্যবস্তু

  • অনেক পুরুষ চালক ইচ্ছে করেই মহিলা ড্রাইভারদের ট্রাফিক সিগনালে হয়রানির অভিজ্ঞতা তৈরি করেন।

  • কেউ হর্ন বাজান অবিরত, কেউ পাশে দাঁড়িয়ে ব্যঙ্গ করেন— “এত বারণ করেও মেয়েরা গাড়ি চালায়!”

📌 কলকাতার ব্যস্ত রাস্তায় মহিলা ড্রাইভারদের অসুবিধা এখানে একেবারে স্পষ্ট—অকারণে মানসিক চাপ তৈরি হয়।

অদৃশ্য মানসিক অবরোধ

  • কলকাতার রাস্তায় মহিলা চালকদের নিরাপত্তা-র অভাব মানে শুধু বাহ্যিক হুমকি নয়, নিজস্ব আত্মবিশ্বাসেও ধাক্কা।

  • কেউ কেউ বলেন,
    “প্রতি দিন ভাবি, আজ হয়তো শান্তিতে ফিরবো, কিন্তু ফের একশ্রেণির কটুক্তি জুটেই যায়।”

📌 এই নিরব ক্ষরণই মহিলা চালকদের সম্মুখীন সমস্যার সমাধান কী—এই প্রশ্নে নতুন মাত্রা যোগ করে।

📊 এক নজরে পরিসংখ্যান (2023 নাগাদ):

চালকের ধরনসংখ্যার আনুমানিক হারট্র্যাফিকে প্রভাব
পুরুষ চালক৮৩%আধিপত্যশীল
মহিলা চালক১৭%নিয়ম মেনে চলেন, তবু টার্গেট

🛑 কলকাতায় মহিলা চালকদের প্রতি পুরুষ চালকদের বাজে ব্যবহার-এর সংখ্যাগত ভিত্তিও উপেক্ষা করা যায় না।

একটি সত্যি গল্প — নীরব চিৎকার

স্নেহা রায়, সল্টলেকের বাসিন্দা, একদিন রাত দশটায় বাড়ি ফিরছিলেন অফিস থেকে।
মামার বাড়ি থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে ফিরছিলেন, একা। EM Bypass-এর মাঝপথে এক টোটো চালক গাড়ির পাশ ঘেঁষে এসে বলে—
“ড্রাইভ নয়, ডেটিং করো চলো?”

🛑 স্নেহা প্রথমে থমকে যান, তারপর মুখে বলার সাহস পাননি, কেবল গাড়ির জানলা তুলে ফেলেন।
এই অভিজ্ঞতা তাঁকে আজও রাতে গাড়ি চালাতে অনিচ্ছুক করে তোলে।
এটাই তো “কলকাতার রাস্তায় মহিলা চালকদের নিরাপত্তা”র আসল চিত্র।

From bus conductor to driver, Kolkata's Pratima Poddar's journey has  shattered many stereotypes | YourStory

🚦 ট্রাফিক সিগনালে হয়রানির অভিজ্ঞতা: নিঃশব্দ নির্যাতনের এক অনুচ্চারিত ইতিহাস

কলকাতায় মহিলা গাড়িচালকদের হয়রানি আজকাল শহরের প্রতিটি ট্রাফিক সিগনালে নতুন মাত্রা নিচ্ছে।
বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলা বা রাতের সময়, কলকাতার ট্র্যাফিকে মহিলা গাড়িচালকদের সমস্যা যেন নিত্যদিনের প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাস্তবতার অন্তরালে যা দেখা যায় না:

📌 শব্দের মারপ্যাঁচে মূর্ত অশ্লীলতা:

  • “ওটা মহিলা চালাচ্ছে, তাই দেরি!” – এ যেন অশ্রুতিযুক্ত অপমান।

  • রাস্তায় মহিলা চালকদের প্রতি কটুক্তি, মুখে হেসে উচ্চারিত হলেও তার ভিতর লুকিয়ে থাকে সামাজিক বৈষম্য।

👉 মহিলা চালকদের জন্য নিরাপদ শহর কি কলকাতা — এই প্রশ্নের উত্তর মেলে না, কারণ হয়রানির ধরন চোখে পড়ে না, কানে বাজে।

📌  দৃষ্টির মাধ্যমে অবজ্ঞা:

  • “নিরব নজরদারি” – মহিলা চালককে লক্ষ্য করে একটানা তাকিয়ে থাকা, তা-ও rearview mirror লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট হয়।

  • এটি একটি নীরব মানসিক নির্যাতন, যা মহিলা ড্রাইভারদের যৌন হয়রানির একটি সূক্ষ্ম রূপ।

📌 অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা একটি সত্য ঘটনা:

🛑 ঘটনা: পার্ক স্ট্রিট, কলকাতা | রাত ৯টা ২০ মিনিট

সুরভি মুখার্জি, একজন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, নিজস্ব গাড়ি নিয়ে ফেরার সময় পার্ক স্ট্রিট মোড়ে সিগনালে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
পাশে একটি বাইক এসে থামে। বাইকের আরোহী বললেন –
“দিদি, হর্ন শুনে না? না শুনলে তো শুধু গাড়ি নয়, আপনিও হেরে যাবেন!”
এরপর বাইকটি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে intimidating stare দিতে থাকে।

🎯 এই ছোট্ট মুহূর্তই প্রমাণ করে কলকাতার রাস্তায় মহিলা চালকদের নিরাপত্তা কতটা সংকটাপন্ন।

📊 তথ্যের চিত্র:

ড্রাইভার শ্রেণিশতাংশ (%)সাধারণ অভিজ্ঞতা
পুরুষ চালক (কলকাতা)91%মন্তব্য, চাপ সৃষ্টি, ওভারটেক প্রবণতা
মহিলা চালক (কলকাতা)9%মহিলা চালকদের হয়রানি, নিরাপত্তাহীনতা

✅ সূত্র: Kolkata Traffic Dept. Report (2024)

📌  সিগনালে গাড়ির হর্নই নয়, অস্থিরতা ও সংকীর্ণ মানসিকতার প্রতিফলন:

  • মহিলা গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে রাস্তার কটুক্তি ও বাজে মন্তব্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, এটি একটি সামাজিক ব্যর্থতার পরিচয়।

  • ট্রাফিক সিগনালে পুরুষ চালকেরা প্রায়শই কলকাতায় মহিলা চালকদের প্রতি পুরুষ চালকদের বাজে ব্যবহার প্রদর্শন করেন, বিশেষত যদি সামনে মহিলা গাড়ি চালাচ্ছেন বুঝতে পারেন।

মহিলা চালকদের জন্য নিরাপদ শহর কি কলকাতা?

🧭 প্রশ্নের গভীরে:

মহিলা চালকদের জন্য নিরাপদ শহর কি কলকাতা?”—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে উঠে আসে নীরব আতঙ্ক, অসহায় বাস্তবতা এবং অদৃশ্য প্রতিরোধের চিত্র।

📌 নিরাপত্তা মানেই কেবল রাস্তার আলো নয়:

▪️ রাস্তার আলো, ক্যামেরা, ট্রাফিক পুলিশ — এগুলিই কি যথেষ্ট?

  • অধিকাংশ ট্রাফিক সিগনাল জোনে মহিলা চালকদের হয়রানি ঘটে ঠিক সেই জায়গাতেই, যেখানে আলো আছে কিন্তু মনোযোগ নেই।

  • বিশেষত পার্কিং স্পট, অন্ধকার গলি বা নির্জন রাস্তা — এখানে কলকাতায় মহিলা চালকদের প্রতি পুরুষ চালকদের বাজে ব্যবহার রোজকার বাস্তব।

অপরাধ ঘটার স্থান (2024 মহিলা ড্রাইভার রিপোর্ট)
📊 Heatmap-style Representation (উচ্চ থেকে নিম্ন ঝুঁকির এলাকা):

এলাকাঝুঁকির মাত্রাকারণ
EM Bypass🔴🔴🔴🔴🔴ওভারটেক, তির্যক মন্তব্য, বাইক টেইলিং
Park Street🔴🔴🔴🔴হর্ন বুলিং, মন্তব্য, চাপ সৃষ্টি
Salt Lake Sector V🔴🔴🔴সন্ধ্যায় নির্জনতা, পুলিশ অনুপস্থিত
Rabindra Sarobar🔴🔴গাড়ি লক্ষ্য করে চাহনি, সংকীর্ণ রাস্তা

📌 বাস্তব একটি ঘটনা:

🎤 প্রিয়া ব্যানার্জি, একজন কলেজ শিক্ষিকা, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে সন্ধ্যা ৭টায় গড়িয়াহাট থেকে ফেরার পথে সন্তোষপুর মোড়ে এক ব্যক্তির হাতে হেনস্তার শিকার হন।

🚗 ঘটনার বিবরণ:

“একটি বাইক গাড়ির একদম ঘাড়ে এসে দাঁড়াল। বারবার হর্ন। আমি নড়তেই উনি পাশ দিয়ে বললেন, ‘গাড়ি চালাতে পারো না তো কেন চালাও?’ আমি চুপ করেও পার পাইনি।”

📌 বিষয়টি থানায় জানানোর পরেও অভিযোগ রেজিস্টার হয়নি, কারণ “কোন শারীরিক স্পর্শ হয়নি”।
এটাই প্রমাণ করে, কলকাতায় মহিলা গাড়িচালকদের সমস্যা শুধুই বাহ্যিক নয়, প্রাতিষ্ঠানিক নীরবতার সঙ্গেও জড়িত।

📌 কী বলছে আইন?

  • কলকাতা পুলিশ অ্যাপে “Street Harassment” অপশন থাকলেও রিয়েল-টাইম সাড়া মাত্র ১৩% ক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে।

  • সিসিটিভি থাকা সত্ত্বেও, ট্রাফিক পুলিশ অনেক সময় মহিলা ড্রাইভারদের অভিযোগকে গুরুত্ব দেয় না

কলকাতা হয়তো আলোর শহর, কিন্তু মহিলা চালকদের জন্য নিরাপদ শহর কি কলকাতা? — এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে প্রতিটি ট্রাফিক সিগনালে, প্রতিটি হর্নে, এবং প্রতিটি মৌন চোখরাঙানিতে।
👉 “নিরাপত্তা” কেবল পুলিশ নয়, বরং সচেতন মনোভাব ও সম্মানের সংস্কৃতি গড়ে তোলা।

কলকাতায় মহিলা গাড়িচালকদের জন্য নিরাপত্তা একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন। প্রতিদিনের জীবনে, যেখানে ট্রাফিক সিগনাল থেকে শুরু করে রাস্তায় চলাচলের প্রতিটি মুহূর্তে মহিলা গাড়িচালকদের হয়রানি এবং কটুক্তি একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে আইনগত সুরক্ষা এবং সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এটি শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয়, আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, একটি নিরাপদ শহর গড়ে তোলা সম্ভব, যেখানে মহিলা চালকদের প্রতি বাজে ব্যবহার বা যৌন হয়রানি হবে একেবারে অগ্রহণযোগ্য।

Kolkata: Gender sensitisation for public vehicle drivers | Kolkata News -  Times of India

একটি সচেতন সমাজের দিকে পদক্ষেপ: মহিলাদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে

  • গাড়ি চালানো মহিলাদের প্রতি পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন: কলকাতায় মহিলা গাড়িচালকদের প্রতি কটুক্তি বন্ধ করতে, পুরুষ চালকদের জন্য সচেতনতা প্রোগ্রাম প্রয়োজন। মহিলাদের গাড়ি চালানো দেখে তাদেরকে অসম্মান করা বা বাজে মন্তব্য করার সংস্কৃতি পরিবর্তন করা দরকার।

  • কিছু চমকপ্রদ তথ্য: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শহরে মহিলা গাড়িচালকদের সম্মান ও নিরাপত্তা দেয়া হয়, সেসব শহরের নিরাপত্তার অবস্থা অনেক ভালো থাকে।

মহিলা ড্রাইভারদের জন্য টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা

  • গাড়ি চালানোর দক্ষতা বাড়ানো: মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত ড্রাইভিং ট্রেনিং কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত। কলকাতার ব্যস্ত রাস্তায় মহিলা গাড়িচালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, তাদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি মহিলা ড্রাইভারদের সম্মুখীন সমস্যার সমাধান নিয়ে প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।

  • অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা: মহিলাদের মধ্যে একে অপরের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করা এবং মহিলা গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে রাস্তার কটুক্তি ও বাজে মন্তব্য নিয়ে আলোচনা করা উচিত।

পুলিশি পদক্ষেপ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা

  • পুলিশের ভূমিকা: কলকাতা পুলিশের উচিত মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো এবং মহিলা চালকদের জন্য নিরাপদ শহর কি কলকাতা তা নিশ্চিত করতে, সিগনালগুলিতে এবং বিশেষ পার্কিং এলাকায় নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি প্রয়োজন।

  • রিয়েল টাইম অ্যাকশন: সড়কগুলিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ক্যামেরা স্থাপন, বিশেষত মহিলা চালকদের জন্য।

সামাজিক মিডিয়া ও সেলিব্রিটিদের ভূমিকা

  • জনসচেতনতা প্রচারণা: কলকাতার সেলিব্রিটিরা এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে প্রচার শুরু করলে সমাজের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব।

  • #SafeWomenDrivers ক্যাম্পেইন চালানো যা মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করবে।

সঠিক আইন ও ট্র্যাফিক নিয়ম

  • মহিলা সুরক্ষা আইন ও ট্র্যাফিক নিয়ম আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। মহিলা চালকদের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে কোনো শিথিলতা অব্যাহত রাখা চলবে না।

  • মহিলা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম: মহিলা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সুনির্দিষ্ট এবং নিরাপত্তা ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

Brutal rape, murder taints Kolkata's reputation as India's safest city for  women | South China Morning Post

তথ্য-চিত্র: মহিলাদের সুরক্ষায় চ্যালেঞ্জের পরিসংখ্যান

সমস্যার ধরনসমস্যার পরিমাণনির্দিষ্ট পদক্ষেপসফলতার হার (%)
রাস্তার কটুক্তি78%সচেতনতা প্রশিক্ষণ60%
যৌন হয়রানি85%পুলিশি তৎপরতা70%
ট্রাফিক সিগনালে সমস্যা65%মহিলা পুলিশের উপস্থিতি50%

​সমাজের প্রত্যেক সদস্যের ওপরেই এই দায়িত্ব বর্তায় যে, কলকাতায় মহিলা গাড়িচালকদের হয়রানি রোধে এগিয়ে আসবে। সঠিক সচেতনতা, পুলিশের সক্রিয় পদক্ষেপ এবং আমাদের মানসিকতা বদলানো প্রয়োজন। একসাথে কাজ করলে, কলকাতার রাস্তায় মহিলা চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব এবং মহিলাদের জন্য একটি নিরাপদ শহর গড়ে তোলা সম্ভব।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply