“চাকা ঘোরে, কিন্তু ঘোরে কাদের ভাগ্য?”
একবার কি ভেবেছেন—যে রাজ্যে কবিতা, রসগোল্লা আর ফুটবলের সঙ্গে মানুষের নাড়ির টান, সেই পশ্চিমবঙ্গ এবার চাকা ঘোরানো শিল্প—অটোমোবাইলের—মাধ্যমে গড়ছে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত? আসুন দেখি, কীভাবে এই শিল্প বদলে দিচ্ছে বিনিয়োগ আর জীবিকার মানচিত্র।

সূচিপত্র

পশ্চিমবঙ্গের অটোমোবাইল শিল্পের বর্তমান অবস্থা: এক নতুন যাত্রার উন্মেষ

“মাটি যেমন আঁকড়ে ধরে বৃক্ষের শিকড়, তেমনি এখন শিল্প আঁকড়ে ধরছে বাংলা মাটিকে।”
বহুদিন ধরেই আলোচনার অন্তরালে থাকা পশ্চিমবঙ্গের অটোমোবাইল শিল্প এখন যেন এক ঘুমন্ত দৈত্যের জাগরণ! ইদানীং এই খাতে যা চলছে, তা নিছক বিনিয়োগের গল্প নয়—এ যেন রাজ্যের সম্ভাবনার রঙিন রূপকথা!

 কলকাতা ও সংলগ্ন শিল্পাঞ্চলে চাকার ছন্দ

  • কলকাতার অটোমোবাইল কোম্পানি গুলি এখন আর শুধু বিক্রয় কেন্দ্রে আটকে নেই।
    হাওড়া, হুগলি, দুর্গাপুর—এইসব অঞ্চলে গড়ে উঠছে ছোট ছোট উৎপাদন কেন্দ্র, যারা গাড়ি শিল্প-এর নানা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে।
    ➤ এই কেন্দ্রগুলি ছোট ও মাঝারি অটোমোবাইল শিল্প পশ্চিমবঙ্গে গঠনের মূল ভিত তৈরি করছে।

 কর্মসংস্থানে নতুন ঝড় – দক্ষতা মানেই সোনা

  • আপনি যদি ভাবেন অটোমোবাইল খাতে কর্মসংস্থান শুধু ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য, ভুল ভাবছেন!
    ➤ এখন দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র-এর মাধ্যমে ট্রেনিং পাচ্ছেন ডিপ্লোমা হোল্ডার, হাইস্কুল পাস যুবকরাও।
    ➤ এই উদ্যোগগুলোর লক্ষ্য, কর্মসংস্থান পশ্চিমবঙ্গে বাড়ানো—একেবারে স্থানীয় স্তরে।

  • ফলে অটোমোবাইল কোম্পানির চাকরি পশ্চিমবঙ্গে এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব!

 বৈশ্বিক নজর – বিদেশি বিনিয়োগে বাংলার আকর্ষণ

  • এই তো কিছুদিন আগেই, অটোমোবাইল শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উত্সাহ দেখিয়েছে জাপান, কোরিয়া ও জার্মানির কোম্পানিগুলি।
    ➤ কলকাতা মেট্রোপলিটন অঞ্চলে ই-ভেহিকল সংস্থাগুলি অটোমোবাইল শিল্পে বিনিয়োগ করার জন্য জমি খুঁজছে।
    পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও অটোমোবাইল শিল্প নিয়ে বেশ আগ্রহী—নতুন “ইভি হাব” তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে।

 ইলেকট্রিক গাড়ির আবির্ভাব – পরিবর্তনের ধ্বনি

  • আগামী দিনে ইলেকট্রিক গাড়ি পশ্চিমবঙ্গ-এর নতুন পরিচয় হয়ে উঠতে চলেছে।
    ➤ সরকারের পরিকল্পনা, আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যের ২৫% যানবাহন ইলেকট্রিক হোক।
    ➤ এতে করে শুধুই পরিবেশ রক্ষা নয়, বাড়বে অটোমোবাইল খাতে কর্মসংস্থান

  • একদম নতুন উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব জমা পড়েছে রাজ্য সরকারের কাছে।

 “মেক ইন ইন্ডিয়া” আর “মেক ইন বেঙ্গল” – হাত ধরাধরি করে

  • কেন্দ্রের মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প-এর ছায়াতলে রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গের শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক নীতি প্রণয়ন করেছে।
    ➤ এ বছর বাজেটে বাজেট ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা অনুযায়ী অটোমোবাইল ও EV শিল্পে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা হয়েছে।

  • এতে করে একদিকে যেমন তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ অটোমোবাইল খাতে, অন্যদিকে বাড়ছে রাজ্যের আর্থিক ভিত্তি।

 কিছু অজানা তথ্য – যা অনেকেই জানেন না

  • আপনি জানেন কি? টাটা মোটরস পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যাওয়ার পরেও তাঁদের সাব-সাপ্লায়ারদের একটা বড় অংশ এখনও রাজ্যেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে!

  • পরিবহন খাত-এর সাথে সংযুক্ত একাধিক নতুন স্টার্টআপ এসেছে বাজারে—যারা বাংলার যুব সমাজকে রাস্তায় নয়, কারখানায় টেনে আনছে!

electric vehicle: West Bengal eyeing investments in carbon black industry  with EV-driven growth - The Economic Times

সারসংক্ষেপে বললে:

  • পশ্চিমবঙ্গের অটোমোবাইল শিল্প এখন শুধুই সম্ভাবনার কথা বলে না, বাস্তব চিত্রও দেখায়।

  • অটোমোবাইল শিল্পে বিনিয়োগ এখন শুধু মেট্রো শহরকেন্দ্রিক নয়, জেলাগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে।

  • এর প্রভাবে কর্মসংস্থান পশ্চিমবঙ্গে আগামী দিনে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

চাকা কেবল গাড়িরই নয়, ভাগ্যেরও ঘোরে। আর যখন সেই ভাগ্যচক্র ঘুরছে পশ্চিমবঙ্গের অটোমোবাইল শিল্প-এর ইঞ্জিনে চেপে, তখন পিছনে থাকা মানে বোকামি।

ইলেকট্রিক ভেহিকল নীতি ও বিনিয়োগ: বাংলার ভবিষ্যতের বিদ্যুৎচালিত ছবি

“যেখানে আগুনের শব্দ থেমে, সেখানে শুরু হয় বিদ্যুতের ছন্দ। পশ্চিমবঙ্গের অটোমোবাইল শিল্প এখন ঠিক সেই মোড়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে পেট্রোল নয়—ইলেকট্রিকই আগামী রাজার ঘোড়া!”

India's Automobile Industry: Growth & Trends | IBEF

 ইভি নীতি ২০২২: পরিকল্পনার ভিত কতটা মজবুত?

  • পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও অটোমোবাইল শিল্প একে অপরের হাত ধরে এগোতে চাইছে ভবিষ্যতের দিকে।
    ➤ ২০২২ সালে ঘোষিত ইলেকট্রিক ভেহিকল নীতি বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে রাজ্যের ২০% গাড়ি হবে ইলেকট্রিক।
    ➤ এই লক্ষ্য পূরণে সরকার অটোমোবাইল শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে দিচ্ছে করছাড়, জমির ভর্তুকি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা।

একাধিক জেলায় ইভি ক্লাস্টার – “চার্জিং স্টেশন নয়, চার্জিং ভবিষ্যৎ!”

  • হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগণায় তৈরি হচ্ছে ইভি পার্ক—যেখানে এক ছাতার নিচে থাকবে গাড়ি সংযোজন, ব্যাটারি ইউনিট ও রিসার্চ ল্যাব।
    ➤ এসব উৎপাদন কেন্দ্র-এ ছোট ও মাঝারি অটোমোবাইল শিল্প পশ্চিমবঙ্গে গড়ে উঠছে, যারা মূলত ইভি যন্ত্রাংশ তৈরি করছে।
    ➤ সরকার চাইছে একাধিক দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ে তুলে লোকাল যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে, যাতে কর্মসংস্থান পশ্চিমবঙ্গে হু-হু করে বাড়ে।

 স্কুটার থেকে বাস—সবই ইভি-র দিকে ঘোরে

  • আজকের দিনে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইলেকট্রিক গাড়ি পশ্চিমবঙ্গ-এ চালু করেছে বহু সংখ্যক ই-বাস।
    ➤ ব্যাটারিচালিত ট্যাক্সি, ই-রিকশা, এবং ডেলিভারি বাইক এখন রাজপথে স্বাভাবিক দৃশ্য।
    ➤ একাধিক কলকাতার অটোমোবাইল কোম্পানি যেমন Hero Electric, Okinawa ও Ola Electric ইতিমধ্যেই বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে।

 বাজেট ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা – কাগজে নয়, কাজে

  • রাজ্যের সর্বশেষ বাজেট অনুসারে, ইভি খাতে মোট ৫০০ কোটি টাকার বাজেট ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা হয়েছে।
    ➤ এতে করছাড়, গবেষণা অনুদান, ও বিদেশি অংশীদারিত্বে সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
    ➤ এর ফলে অটোমোবাইল শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

E-scooter Sales: Battle of e-scooters for customers moves to India's  hinterland, ET Auto

 গ্লোবাল রোডম্যাপে বাংলা – তৃণমূল থেকে টেসলা পর্যন্ত?

  • আপনি কি জানেন? একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে অটোমোবাইল শিল্পের ভবিষ্যৎ দেখে কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় জমি খোঁজাখুঁজি শুরু করেছে।
    ➤ এমনকি টেসলা-র প্রতিনিধিরাও নাকি একবার প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের সঙ্গে কথাও বলেছে (অবশ্য তথ্যটি এখনো গোপন পর্যায়ে)।
    ➤ এই সমস্ত উদ্যোগ অটোমোবাইল শিল্পে বিনিয়োগ-কে এক নতুন দিশা দিচ্ছে।

 কিছু অজানা কিন্তু চমকপ্রদ তথ্য

  • এক সমীক্ষা বলছে, আগামী ৫ বছরে ইলেকট্রিক গাড়ি পশ্চিমবঙ্গ-এ ১ লাখেরও বেশি চাকরি সৃষ্টি করতে পারে।

  • পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও অটোমোবাইল শিল্প যৌথভাবে ব্যাটারি রিসাইক্লিং ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যা ভারতবর্ষে এক অভিনব পদক্ষেপ।

  • মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প-এর সহায়তায় বাংলায় প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ ইভি বাস অ্যাসেম্বলি লাইন চালু হতে চলেছে।

 চার্জ দেওয়া শুধু গাড়িকে নয়, ভবিষ্যতকেও

  • পশ্চিমবঙ্গের অটোমোবাইল শিল্প এখন আর স্টিয়ারিং ধরে নেই, সে নিজেই পথ তৈরি করছে।

  • ইলেকট্রিক গাড়ি পশ্চিমবঙ্গ-এর আগামী দিন বদলে দেবে পরিবেশ, কর্মসংস্থান ও রাজস্বের চিত্র।

  • সরকার, কোম্পানি ও জনগণ—সবাই মিলে গড়ছে এক বিদ্যুৎচালিত আগামীর ছবি।

চাকা এবার ঘুরবে, তাও আর তেলের ভরসায় নয়বিদ্যুৎ, বুদ্ধি আর বিনিয়োগের উপর নির্ভর করেই। আপনি তৈরি তো?”

Leave a Reply