“শেষ কবে ভারতীয় জাতীয় দলে একটিও বাঙালি নাম শুনে মনটা গর্বে ভরে উঠেছিল?”

প্রশ্নটা শুধু আবেগ নয়—এ এক বাস্তবের নির্মম প্রতিচ্ছবি। যেখানেই তাকাই, বাঙালি ক্রীড়াবিদদের জাতীয় পর্যায়ে উপস্থিতি ক্রমশ অস্পষ্ট। এক সময় যে মাটির ঘামেই তৈরি হতো ভারতের গর্ব, আজ সেখানে নীরবতা। এই হারিয়ে যাওয়া সত্তার খোঁজেই আজকের এই আলোচনা।

ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য সত্যিই চিন্তার। এক সময়, বাঙালি খেলোয়াড়রা জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কেন এমনটা ঘটছে? আসুন, বিষয়টি একটু গভীরে দেখি।​

সূচিপত্র

এক সময়ের গৌরবময় অধ্যায়: যেখানে ভারতীয় খেলায় বাঙালির অবদান ছিল স্বর্ণাক্ষরে লেখা

কখনও কি ভেবেছেন, ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ এক সময় কতটা দৃপ্ত ও গর্বজনক ছিল? ইতিহাস যেন নিজেই সাক্ষ্য দেয় সেই অধ্যায়ের মহিমা।

🎖️  ফুটবলের ময়দানে বাঙালির শাসনকাল

🥇 গোলপোস্টের ঈশ্বরেরা ছিলেন বাঙালি

জাতীয় ফুটবল দলে বাঙালি ফুটবলারের সংকট এখন যতই তীব্র হোক, এক সময় এই দল বাঙালি প্রতিভায় ভরপুর ছিল।

  • চুনী গোস্বামী, পিকে ব্যানার্জি, সুধীর কর্মকার, সুব্রত ভট্টাচার্য—তাঁদের ছাড়া ভারতীয় ফুটবলের পরিচয়ই ছিল অসম্পূর্ণ।

  • ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে ভারতের সোনা জয়—তাঁদের ঐতিহাসিক অবদানের ফল।

  • তখনকার সময়ে ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ ছিল এক ধরনের সম্মানসূচক ধারা।

The complete sportsman: Looking back at Chuni Goswami, the footballer and  cricketer

🧩  বাংলা ছিল ভারতীয় ফুটবলের পিঠের হাড়

  • কলকাতা ডার্বি মানেই ছিল জাতীয় দল গঠনের রিহার্সাল।

  • বাঙালি খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে অনুপ্রবেশের বাধা তখন ছিল না, বরং ছিল সহজ প্রবেশপথ।

🏏  ক্রিকেটেও ছিল বাঙালির ঝলক

🏏  এক সৌরভেই ভারতীয় জাতীয় দলের খোলনলচে বদলে যায়

  • সৌরভ গাঙ্গুলী, শুধু একজন ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালি খেলোয়াড় নন—তিনি এক ‘দাদা’, যিনি নেতৃত্ব দিয়ে দলকে জয়মুখী করেছিলেন।

  • তাঁর আগমনে ভারতীয় ক্রিকেটে আসে সাহস, আগ্রাসন ও আত্মবিশ্বাস।

🧠  নাম না-জানা নায়কেরাও ছিলেন

  • শিবলাল যাদব, অরুণ লাল—যাঁরা জাতীয় দলের হাল ধরেছিলেন চুপিচুপি।

  • কিন্তু আজ? ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলে বাঙালিদের অভাব রীতিমতো চিন্তার বিষয়।

🏃 অলিম্পিকেও এক সময় উজ্জ্বল ছিল বাংলার দীপ্তি

🥇  সোনালী অতীতের অলিম্পিক কাহিনি

  • সুধা মিস্ত্রি (হকি), মনোহর আইচ (বডিবিল্ডিং) — অলিম্পিক পর্যায়ে ভারতীয় খেলায় বাঙালির অবদান ছিল প্রভাবশালী।

Manohar Aich: Top Indian bodybuilder dies, aged 104 - BBC News

🔍  আজকের বাস্তবতা

  • বিগত এক দশকে ভারতীয় অলিম্পিক দলে বাঙালিদের অনুপস্থিতি স্পষ্টতই বেড়ে চলেছে।

  • জাতীয় ট্রেনিং ক্যাম্পে আজ বাঙালি নাম প্রায় অধরা।

  • বাঙালি ক্রীড়াবিদদের জাতীয় পর্যায়ে সুযোগের অভাব আজ বাস্তবের নির্মম সত্য।

🧱  তখন ছিল কাঠামো, আজ শুধু স্মৃতি

📉  অবকাঠামোর অবনতি

  • এক সময়ের বিশাল ক্লাব স্ট্রাকচার, স্কুল-কলেজ স্পোর্টস প্রতিযোগিতা—আজ তাতে জং ধরেছে।

  • পশ্চিমবঙ্গের খেলাধুলার পরিকাঠামো আর জাতীয় স্তরের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।

🚧  প্রশাসনিক অযোগ্যতা

  • স্পোর্টস ফেডারেশনে বাঙালি প্রতিভা এবং স্পোর্টস প্রশাসন-এর মধ্যে সমন্বয় হারিয়েছে।

  • আজ জাতীয় দলে পূর্ব ভারতের অবদান কমে যাওয়ার পেছনে এটা বড় কারণ।

 একগুচ্ছ তথ্য যা জানলে আপনি অবাক হবেন

  • ১৯৫১-৬৫: জাতীয় ফুটবল দলের ৬০% সদস্য ছিলেন বাঙালি।

  • ২০০৩: শেষবার ৪ জন বাঙালি একসঙ্গে ক্রিকেট জাতীয় স্কোয়াডে ছিলেন।

  • ২০২4 অলিম্পিক ট্রেনিং স্কোয়াডে মাত্র ১ জন বাঙালি ছিলেন, তাও ব্যাকআপ হিসেবে।

  • বাঙালি খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে অনুপ্রবেশের বাধা এখন এতটাই কঠিন, যে জেলা পর্যায় থেকেই বাধা শুরু হয়।

এটা কি কেবল প্রতিভার অভাব, না কি অন্য কোনও অদৃশ্য অদৃশ্য চাপ কাজ করছে?
আপনার শহরের মাঠে হয়তো এমন প্রতিভা লুকিয়ে আছে, যাদের সামনে ভারতীয় জাতীয় স্পোর্টসে বাঙালির অবমূল্যায়ন একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি: গ্যালারির গর্জনে নেই আর বাঙালি সাড়া!

যেখানে এক সময় ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ ছিল অলিখিত অনিবার্যতা, আজ সেখানে যেন এক করুণ নৈঃশব্দ্য। ময়দান আছে, দর্শক আছে, খেলা আছে—কিন্তু ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালি খেলোয়াড় নেই!

Balaidas Chatterjee - Wikipedia

📉 জাতীয় স্কোয়াডে বাঙালিদের প্রায় অদৃশ্যতা

🔍  সংখ্যার বিচারে চমকে যাওয়ার মতো তথ্য

  • ২০২৫ সালে চলতি জাতীয় ক্রিকেট ও ফুটবল স্কোয়াডে জাতীয় দলে বাঙালির সংখ্যা কমছে বলেই নয়—বলা যায়, প্রায় নেই বললেই চলে।

  • ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলে বাঙালিদের অভাব আজ আর কেবল আক্ষেপ নয়, এক বাস্তব সংকেত।

🧾  অলিম্পিক ও অন্যান্য খেলায় অনুপস্থিতি

  • সাম্প্রতিক অলিম্পিকে ভারত ৭৫ জন অ্যাথলিট পাঠালেও ভারতীয় অলিম্পিক দলে বাঙালিদের অনুপস্থিতি ছিল চূড়ান্ত হতাশাজনক।

  • শ্যুটিং, বক্সিং, কুস্তি—সব ক্ষেত্রেই বাংলার উপস্থিতি শূন্যের কোঠায়।

🚫  প্রতিভা আছে, কিন্তু সুযোগের অভাব

🧒  জেলা স্তরের ট্যালেন্ট চাপা পড়ছে

  • মালদা, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ—এমন বহু জেলায় ১৬-১৮ বছরের ছেলেরা দুর্দান্ত ফুটবল বা ক্রিকেট খেলে, কিন্তু
    বাঙালি ক্রীড়াবিদদের জাতীয় পর্যায়ে সুযোগের অভাব চিরাচরিত নিয়মে তাদের থামিয়ে দেয়।

🏫  প্রশিক্ষণের কাঠামো দুর্বল

  • স্কুল পর্যায়ের খেলাধুলার অবনতি, আধুনিক ট্রেনিংয়ের অভাব এবং কোচদের অপর্যাপ্ততা মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের খেলাধুলার পরিকাঠামো কার্যত ভেঙে পড়েছে।

  • যাদের জাতীয় স্তরে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল, তারাও হারিয়ে যায় উচ্চতর স্তরের প্রস্তুতির অভাবে।

🧠 স্পোর্টস প্রশাসনের অদূরদর্শিতা

⚙️  নির্বাচনের পদ্ধতিতে পক্ষপাতিত্ব

  • জাতীয় স্তরে নির্বাচনের সময় বাঙালি খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে অনুপ্রবেশের বাধা তৈরি হয় রাজনৈতিক লবি ও প্রভাবশালী রাজ্যের আধিপত্যে।

  • বাংলার প্রতিভা বারবার উপেক্ষিত হয়, কারণ স্পোর্টস বডিগুলিতে প্রতিনিধিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে।

🧩  মিডিয়া ও প্রমোশনের ঘাটতি

  • যখন উত্তর ভারতের একজন জুনিয়র অ্যাথলিটের ভিডিও ভাইরাল হয়, তখন বাংলার কোনও প্রতিভাবান ছেলের সাফল্য আটকে থাকে লোকাল পত্রিকার কোণায়।
  • এর ফলেই ভারতীয় খেলায় বাঙালির অবদান প্রয়াত ইতিহাসের মতো ধীরে ধীরে বিস্মৃতির অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে।

🕰️ মনস্তত্ত্বের গহনে লুকিয়ে থাকা সমস্যাগুলো

🧘  পরিবার ও সমাজের মানসিকতা

  • আজও বহু বাঙালি পরিবারে খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে মানা হয় না।

  • পড়াশোনার চাপে ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ প্রাথমিক স্তরেই গলাটিপে মেরে ফেলা হয়।

😔  স্বপ্নের অভাব, প্রেরণার সংকট

  • কোনও রোল মডেল না থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম কাকে দেখে উৎসাহ পাবে?

  • জাতীয় ফুটবল দলে বাঙালি ফুটবলারের সংকট মানে শুধু দলে না থাকা নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্মের অনুপ্রেরণারও অভাব।

📌 তুলনামূলক বিশ্লেষণ: অন্য রাজ্য বনাম বাংলা

রাজ্যজাতীয় দলবাঙালি খেলোয়াড়দের সংখ্যামন্তব্য
মহারাষ্ট্রক্রিকেট, অলিম্পিক১২গঠনমূলক প্রশিক্ষণ ও শক্তিশালী ক্লাব কাঠামো
পাঞ্জাবহকি, কুস্তিসরকারি সহায়তা ও উৎসাহ
বাংলাফুটবল, ক্রিকেট২ (ব্যাকআপ)বাঙালি খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে অনুপ্রবেশের বাধা চরম

 স্বপ্ন আছে, পথ নেই

আজকের বাংলার খেলোয়াড়দের মুখে অভিমান—তাদের খেলার ইচ্ছা আছে, সাধনা আছে, কিন্তু ভারতীয় জাতীয় স্পোর্টসে বাঙালির অবমূল্যায়ন যেন এক অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি করে রেখেছে।

Sourav Ganguly is a born leader, inspired India to win on foreign shores':  K Srikkanth | Cricket News - The Indian Express

ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ এখন শুধুই পরিসংখ্যানের বিষয় নয়, এক সাংস্কৃতিক সংকট।

কেন এই পতন?

“পূর্বে যেখানে গ্যালারিতে কানে বাজত ‘দা শ্যাষ কর দাদা!’, আজ সেখানে শুধুই প্রান্তিকতার প্রতিধ্বনি।”
ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ এতটা হ্রাস পেল কেন? এ প্রশ্ন শুধু খেলাধুলা নয়—একটা জাতিগত আত্মপরিচয়ের সংকট।

🧱 পরিকাঠামোগত গলদ

🏟️  খেলাধুলার মাঠ আছে, কিন্তু রক্ষণা-বেক্ষণ নেই

  • বহু জেলায় স্টেডিয়াম আছে, কিন্তু সেগুলো যেন খোলামেলা ঝুড়ির মতো—ছিদ্রে ছিদ্র।

  • পশ্চিমবঙ্গের খেলাধুলার পরিকাঠামো উন্নত না হলে ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালি খেলোয়াড় উঠে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

🛠️  একাডেমি আছে, কিন্তু কোচ নেই

  • নামমাত্র একাডেমিতে নেই প্রফেশনাল ট্রেনিং, নেই মনোবিজ্ঞানী, নেই নিউট্রিশন প্ল্যান।

  • বাকি ভারতের তুলনায় বাংলার খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে এক হাতে বাঁধা চোখে—অপেশাদার ও অপ্রস্তুত।

🔎  নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পক্ষপাত ও কেন্দ্রিকতা

⚖️  লবির দাপটে তছনছ স্বপ্ন

  • বাঙালি খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে অনুপ্রবেশের বাধা সৃষ্টি করে উত্তর, পশ্চিম বা দক্ষিণ ভারতের কোটার আধিপত্য।

  • রাজনৈতিক সম্পর্ক, মিডিয়া কভারেজ ও কর্পোরেট স্পনসর—সবই চলে “নিউ দিল্লি-মুম্বাই কনেকশন” ধরে।

📉  ট্যালেন্ট স্কাউটিং-এর অভাব

  • বাংলায় স্থানীয় পর্যায়ে অসাধারণ প্রতিভা আছে, কিন্তু তা খুঁজে নেওয়ার বা গ্রুম করার কোনও মানসম্মত ব্যবস্থা নেই।

  • ফলে জাতীয় দলে বাঙালির সংখ্যা কমছে—এটা হয়ে উঠছে এক প্রজন্মের অপূরণীয় ক্ষতি।

🧠 মানসিকতার সংকোচন

👪  পরিবার মানে শুধু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার

  • “খেলা করে কিসের ভবিষ্যৎ?”—এই প্রশ্নটাই যেন বাংলার ঘরে ঘরে বাঙালি ক্রীড়াবিদদের স্বপ্ন নষ্ট করে।

  • আর তাই ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলে বাঙালিদের অভাব যেন শুরু হয়েছে খেলার মাঠে নয়, ঘরের পড়ার টেবিলেই।

🌀  মিডিয়া ও প্রেরণার ঘাটতি

  • বাংলা মিডিয়া কেবল ক্রিকেট আর ফুটবলে আটকে; শ্যুটিং, কুস্তি বা অ্যাথলেটিকসে বাংলার কেউ কিছু করলেও তা পৌঁছয় না গণমাধ্যমে।

  • ভারতীয় খেলায় বাঙালির অবদান যেন নিজেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রচারের আলোতে।

💸  অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ

📊  খেলোয়াড় মানেই গরিব ঘরের ছেলে?

  • বহু প্রতিভাবান বাঙালি ক্রীড়াবিদদের খেলার সামগ্রী কেনার ক্ষমতাটুকুও থাকে না।

  • স্পনসর বা বৃত্তি না পাওয়ায় অনেকেই মাঝপথে খেলা ছেড়ে দেন।

💼  খেলাধুলায় কর্মসংস্থানের সংকট

  • কলকাতায় যদি ভালো খেলেও সরকারি বা কর্পোরেট চাকরির সুযোগ না থাকে, তাহলে ভারতীয় জাতীয় স্পোর্টসে বাঙালির অবমূল্যায়ন অব্যাহত থাকবেই।

🚫 রাজনীতি ও খেলাধুলার দ্বৈরথ

🧾  স্পোর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে রাজনীতির চোরা প্রবাহ

  • রাজ্যের স্পোর্টস ফেডারেশনগুলিতে এখনও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ।

  • ফলাফল: যোগ্য ব্যক্তি নয়, “যাকে বললে চলে”, সে-ই যায় ট্রায়াল কমিটিতে।

⚠️  খেলোয়াড়দের নিরাপত্তাহীনতা

  • জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া মানেই খেলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কোনও বিকল্প আয়ের সুযোগ না থাকায় অনেকেই অভিমান করে খেলা ছেড়ে দেন।

 একজোড়া প্রশ্ন রয়ে যায়—

“যদি মুম্বই বা হরিয়ানা থেকে প্রতি বছর নতুন মুখ আসে জাতীয় দলে, তবে বাংলা পিছিয়ে কেন?”
“ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ কি ভবিষ্যতেও শুধু স্মৃতির বিষয় হয়ে থাকবে?”

Chakdaha express: A biography of Jhulan Goswami – ZAP Cricket

সমাধানের পথ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

“সপ্ন ফিরবে, যদি জাগে সাহস। মাঠ জাগবে, যদি কাঁদে মন।”
বাংলার ক্রীড়া-সম্মান কি আবার ফিরতে পারে? অবশ্যই পারে—যদি আমরা কিছু জিনিস বদলাই, ভেঙে ফেলি পুরনো গোঁড়ামি, আর গড়ে তুলি এক নতুন দিগন্ত।

🏗️  পরিকাঠামোর নতুন বিন্যাস

🏟️  জেলার স্তরে আধুনিক স্পোর্টস হাব

  • প্রতিটি জেলায় স্থাপন হোক “মিনি অলিম্পিক ভিলেজ”, যেখানে কোচিং, ফিজিওথেরাপি, ডায়েট কাউন্সেলিং একসঙ্গে থাকবে।

  • এতে করে বাঙালি ক্রীড়াবিদদের জাতীয় পর্যায়ে সুযোগের অভাব অনেকটা কমবে।

🔧  স্কুল-কলেজকে খেলাধুলার কেন্দ্র বানানো

  • খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হোক ছোটবেলা থেকে।

  • স্কুলগুলিকে বাধ্যতামূলকভাবে খেলাধুলার জন্য বরাদ্দ করা হোক পরিকাঠামো ও বাজেট।

  • এইভাবে ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ বাড়ানো সম্ভব।

🔍  প্রতিভা খোঁজার আধুনিক পদ্ধতি

🧠 AI-ভিত্তিক ট্যালেন্ট স্কাউটিং

  • প্রযুক্তির মাধ্যমে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে রাজ্যের প্রতিটি কোণায় ট্যালেন্ট খোঁজ করা হোক।

  • যাতে আর কেউ বাঙালি খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে অনুপ্রবেশের বাধা-র শিকার না হয়।

🧪  “স্পোর্টস ল্যাব” কালচারের প্রচলন

  • মডার্ন বায়োমেকানিক্স, ডায়েটেটিকস, সাইকোলজি মিলে গড়ে উঠুক ‘স্পোর্টস সায়েন্স ল্যাব’ কলকাতা ও শিলিগুড়িতে।

  • এতে ভারতীয় খেলায় বাঙালির অবদান আবার মাথা তুলবে।

🎯  অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও নীতিগত পরিবর্তন

🧾  রাজনীতিমুক্ত স্পোর্টস বোর্ড

  • বেছে নেওয়া হোক ক্রীড়াবিদদের দ্বারা পরিচালিত সংস্থা, যারা খেলাটাকে বোঝে—পলিটিক্স নয়।

  • এতে জাতীয় ফুটবল দলে বাঙালি ফুটবলারের সংকট কিছুটা হলেও মেটাতে পারব।

🔄  জাতীয় নির্বাচনে রাজ্য কোটা নিশ্চিত

  • প্রতিটি জাতীয় দলে থাকুক অঞ্চলভিত্তিক ‘মিনিমাম রিপ্রেজেন্টেশন’ নীতি।

  • এইভাবেই ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলে বাঙালিদের অভাব ধীরে ধীরে মুছে যাবে।

📢  মিডিয়া ও উৎসাহ-সংস্কৃতি গড়ে তোলা

📺  আঞ্চলিক খেলোয়াড়দের হাইলাইট করা

  • বাংলার প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদদের নিয়ে তৈরি হোক ডকুমেন্টারি, ওয়েব সিরিজ, ইন্টারভিউ—লোক দেখুক, জানুক।

💬  সমাজে খেলার মর্যাদা বাড়ানো

  • “খেলে কী হবে?” – এই ভাবনার পরিবর্তে আসুক – “খেলে দেশ গড়ে।”

  • কারণ যদি সমাজ মানে না দেয়, তাহলে বাঙালি খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে অনুপ্রবেশের বাধা তো থেকেই যাবে।

💸 অর্থনৈতিক সহায়তা ও স্পনসরশিপ

💰 রাজ্য সরকারি স্কলারশিপ

  • জেলাভিত্তিক বাছাই করে দরিদ্র অথচ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের মাসিক ভাতা দিক সরকার।

  • এতে বাঙালি ক্রীড়াবিদদের সংকট অনেকটা লাঘব হবে।

🤝  কর্পোরেট স্পনসরশিপে ‘বেঙ্গল স্পোর্টস লিগ’

  • বেসরকারি সংস্থাগুলিকে উৎসাহিত করা হোক ‘Bengal Sports League’-এর মাধ্যমে তরুণ প্রতিভাদের ফাইনান্সিং করার জন্য।

  • এতে তৈরি হবে জাতীয় স্তরের জন্য প্র্যাকটিস প্ল্যাটফর্ম।

🥹 একটি নতুন ভোর আসুক…

“আবার যেন শুনি—‘এই ছেলে আমাদের পাড়া থেকে উঠে এসেছে, আজ ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ গর্বের জায়গা।’”

“যে শিশু মাঠে খেলে, তাকে খেলোয়াড় নয়—‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে দেখি।”

Wriddhiman Saha credits THIS Indian legend for his success at international  level

বাংলা কি ফিরতে পারবে জাতীয় দলে?

ভারতীয় জাতীয় দলে বাঙালিদের অংশগ্রহণ আজ যেন হারিয়ে যাওয়া সুর।
জাতীয় দলে বাঙালির সংখ্যা কমছে, কারণ শুধু প্রতিভা থাকলেই হয় না—প্রয়োজন অবকাঠামো, মনোযোগ আর সুযোগ।

আজকের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন: বাঙালি খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে অনুপ্রবেশের বাধা কেন এত শক্ত?

এ বাধা কাটাতে হলে চাই—

  • প্রশাসনিক সদিচ্ছা

  • জেলায় জেলায় স্পোর্টস ইকো-সিস্টেম

  • এবং সমাজের সম্মিলিত সমর্থন

ভারতীয় খেলায় বাঙালির অবদান যেন আবার দেখা যায় অলিম্পিক, ক্রিকেট বা ফুটবল ময়দানে।

দিন বদলাবে—যেদিন আমরা শুধু অভিযোগ করব না, বরং গড়ে তুলব সেই মাঠ যেখানে বাঙালি ক্রীড়াবিদদের সংকট শুধু অতীতের গল্প হয়ে থাকবে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply