“জাতিসংঘের বিশাল নীল পতাকার নীচে ভারত কি চিরকাল দর্শক হয়েই থাকবে, নাকি একদিন স্থায়ী সদস্যপদের আসনে বসে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে?” 🌍 এই প্রশ্ন আজ সময়ের দর্পণে প্রতিফলিত হচ্ছে। ভারতের অবস্থান জাতিসংঘে শুধু কূটনৈতিক লড়াই নয়, বরং এক ঐতিহাসিক দাবির প্রতিচ্ছবি!

ভাবুন তো, এমন একটা মঞ্চ, যেখানে বিশ্বের সব বড় দেশ একত্রিত হয় সিদ্ধান্ত নিতে—সেটাই জাতিসংঘ। আর এই বিশাল আন্তর্জাতিক সংগঠনে ভারতের ভূমিকা দিনে দিনে শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ভারত কি নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য হতে পারবে? জাতিসংঘে ভারতের ভবিষ্যৎ ভূমিকা কেমন হতে চলেছে?

সূচিপত্র

জাতিসংঘে ভারতের বর্তমান অবস্থান: শক্তিশালী কিন্তু সীমাবদ্ধ

জাতিসংঘের বিশাল নীল পতাকার তলায় ভারত আজ এক দ্বিধায় দাঁড়িয়ে—একদিকে রয়েছে তার অবিস্মরণীয় অবদান, অন্যদিকে স্থায়ী সদস্যপদ না পাওয়ার সীমাবদ্ধতা। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের শক্তি ও সীমাবদ্ধতা দুটি দিকেই চোখ রাখা জরুরি।

Role of India in United Nations: 5 Key Contributions

শান্তিরক্ষায় ভারতের অবদান: অদৃশ্য নায়ক

ভারত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

  • সেনা বাহিনীর অসাধারণ ভূমিকা: ভারত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অন্যতম বৃহত্তম অবদানকারী দেশ। ১৯৫০ সাল থেকে আফ্রিকা, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় সেনারা শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত রয়েছেন।

  • নারী শান্তিরক্ষীদের সক্রিয়তা: খুব কম মানুষ জানেন যে, ২০০৭ সালে ভারতই প্রথম দেশ যারা শান্তিরক্ষা বাহিনীতে পূর্ণাঙ্গ নারী ইউনিট পাঠিয়েছিল। লাইবেরিয়ায় মোতায়েন হওয়া এই নারী বাহিনী বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছিল।

  • শান্তিরক্ষার মূল্য: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে ভারতের ১৭৭ জন সেনা শহিদ হয়েছেন—যা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। কিন্তু এত অবদান সত্ত্বেও ভারতের নীতি-নির্ধারণে সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

কূটনৈতিক শক্তি: বিশ্বে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা

ভারত শুধু শান্তিরক্ষাতেই নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও প্রভাবশালী ভূমিকা রাখছে।

  • G-20 সভাপতিত্বে সাফল্য: ২০২৩ সালে ভারতের G-20 সভাপতিত্ব ছিল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বড় মাইলফলক। ভারত জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জ্বালানির ন্যায্য বণ্টনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল।

  • ব্রিকস (BRICS)-এ ভারতীয় উপস্থিতি: ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এই জোটে ভারতের উপস্থিতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার প্রভাব বাড়িয়েছে।

  • প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর: ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে সংলাপ বজায় রেখেছে, যা কূটনৈতিক ভারসাম্যের দৃষ্টান্ত।

India and the United Nations-A Complex Relationship!!!!

নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের অস্থায়ী সদস্যপদ: আংশিক শক্তি

ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছে।

  • প্রভাবের সীমাবদ্ধতা: ১৯৫০ সাল থেকে ভারত আটবার অস্থায়ী সদস্য ছিল। কিন্তু স্থায়ী সদস্যদের মতো ভেটো ক্ষমতা না থাকায় নীতিনির্ধারণে ভূমিকা সীমিত।

  • শেষ সদস্যপদ: ২০২1-2022 সালে ভারত অস্থায়ী সদস্যপদ পায়। কিন্তু বড় ইস্যুতে, যেমন ইরান-ইসরায়েল সংকট বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ভারতের ভূমিকা ছিল প্রতীকী মাত্র।

  • ভোটিংয়ে সীমিত ক্ষমতা: অস্থায়ী সদস্যরা বড় নীতিগত সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে না। ভারতের মতামত শুনলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করে পাঁচ স্থায়ী সদস্যের (P5) উপর।

অবস্থান: শক্তিশালী কিন্তু সিদ্ধান্তহীন

ভারত জাতিসংঘের বিভিন্ন শাখায় সক্রিয় ভূমিকা রাখলেও স্থায়ী সদস্যপদ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই প্রান্তিকেই থেকে যায়।

  • দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব: ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। কিন্তু জাতিসংঘে চীন, রাশিয়া, আমেরিকা বা ফ্রান্সের মতো সিদ্ধান্তমূলক ক্ষমতা তার নেই।

  • গ্লোবাল সাউথের নেতা: উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতিনিধিত্বে ভারত গুরুত্বপূর্ণ মুখপাত্র হলেও, বড় সিদ্ধান্তে সে এখনও অতিথির ভূমিকাতেই রয়ে গিয়েছে।

  • সীমাবদ্ধ প্রভাব: জাতিসংঘে ভারতের অবস্থান সম্মানজনক হলেও, সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার প্রভাব প্রায় নেই বললেই চলে।

Role of India in United Nations: 5 Key Contributions

ভারতের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিত: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

ভারতের জাতিসংঘে অবস্থান একদিকে শক্তিশালী, অন্যদিকে সীমাবদ্ধ।

  • শক্তি: শান্তিরক্ষায় অনন্য অবদান, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে প্রভাব এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হওয়া।

  • সীমাবদ্ধতা: নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ না থাকায় বড় সিদ্ধান্তে ভূমিকা শূন্য।

  • বাস্তবতা: জাতিসংঘে ভারত এখনও ‘বিশ্বনায়ক’ নয়, বরং ‘বিশ্বশ্রোতা’ হয়ে রয়ে গিয়েছে।

এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ভারত তার কূটনৈতিক কৌশল ও আন্তর্জাতিক সমর্থন দিয়ে স্থায়ী সদস্যপদ অর্জনের দিকে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—বিশ্বরাজনীতির এই দাবায় ভারত কি কখনও স্থায়ী সদস্যের আসনে বসবে, নাকি প্রান্তিকেই থেকে যাবে?

নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ: স্বপ্ন না বাস্তবতা?

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) হলো বিশ্বশক্তির আসল দাবার বোর্ড, যেখানে মোহনায় বসে সিদ্ধান্ত নেয় পাঁচ ‘দুনিয়া-নেতা’—আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন। এই পাঁচ রাষ্ট্রের হাতে রয়েছে ভেটো ক্ষমতা—একটি ‘না’ ভোটেই যেকোনো সিদ্ধান্তকে নস্যাৎ করার অধিকার। কিন্তু ভারতের মতো বিশাল রাষ্ট্রের সেই ক্ষমতা নেই। কেন? এই প্রশ্নেই আবর্তিত ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ লাভের দীর্ঘ লড়াই।

Role of India in United Nations ~ Group Discussion Ideas

স্থায়ী সদস্যপদ: ভারতের দীর্ঘ প্রত্যাশা

ভারত স্বাধীনতার পর থেকেই জাতিসংঘে সক্রিয় সদস্য। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদের জন্য তার আকাঙ্ক্ষা আজও অপূর্ণ।

  • ১৯৫০-এর প্রথম প্রত্যাখ্যান: ১৯৫০ সালে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ লাভের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু নেহেরু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কারণ তিনি চীনের বদলে স্থায়ী সদস্য হতে চাননি। ভারত চেয়েছিল চীনকেই প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দিতে। ইতিহাসের পাতায় এটি আজও ভারতের এক বড় কৌশলগত ভুল বলে মনে করা হয়।

  • ১৯৯১-এ প্রত্যাখ্যান: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, ভারতের শক্তি ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়লেও স্থায়ী সদস্যপদ লাভের প্রস্তাব ভেটো হয়।

  • বর্তমান দাবি: ২০২0 সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের পক্ষে জোরালো দাবি তুলেছিলেন। মোদি বলেছিলেন, “ভারত কি বিশ্বশান্তির পক্ষে সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে থেকেও নীতিনির্ধারণের বাইরে থাকবে?

ভারতের শক্তিশালী দাবির কারণ: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ লাভের পক্ষে রয়েছে একাধিক শক্তিশালী যুক্তি।

  • বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র: ১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যা, গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং উন্নয়নশীল দেশের অগ্রণী ভূমিকায় থাকা ভারতকে বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণ অযৌক্তিক।

  • বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের প্রভাব: ভারতের জিডিপি এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর মতো সংস্থায় ভারতের প্রভাব বাড়ছে, কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে তার ক্ষমতা নেই।

  • শান্তিরক্ষায় ভারতীয় সেনার অবদান: জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ভারতের সেনারা সর্বাধিক অবদান রাখছে। তবুও নীতিনির্ধারণে ভারতের ভূমিকা প্রায় নেই।

  • G-4 গোষ্ঠীর সমর্থন: ভারত, জাপান, জার্মানি এবং ব্রাজিল একসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের জন্য দাবিদার। এই G-4 গোষ্ঠী আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী হলেও এখনও P5-এর জায়গা পায়নি।

The United Indian | Government Sector | India And UN: The Ongoing Rift In This Global Partnership

চীনের বাধা: ভারতের সদস্যপদের প্রধান কাঁটা

স্থায়ী সদস্যপদ লাভের পথে ভারতের সবচেয়ে বড় বাধা হলো চীনের বিরোধিতা

  • চীনের রাজনৈতিক ভেটো: চীন বহুবার ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে। কারণ, ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত বিবাদ এবং ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন রয়েছে।

  • পাকিস্তান-চীন আঁতাত: চীন বারবার পাকিস্তানের পক্ষে থেকে ভারতের পদক্ষেপে বাধা দেয়। বিশেষত, কাশ্মীর ইস্যুতে চীনের বিরোধিতা UNSC-তে ভারতের অবস্থানকে দুর্বল করেছে।

  • চীনের গোপন কূটনীতি: ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর, ভারত জইশ-ই-মোহাম্মদ নেতা মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ঘোষণা করতে চাইলেও চীন বারবার ভেটো দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সমর্থন: আশার আলো

ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ লাভের দাবিকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছে আমেরিকা এবং ফ্রান্স।

  • আমেরিকার জোরালো সমর্থন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একাধিকবার বলেছেন, “ভারতের উচিত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়া।” ২০২৩ সালে মার্কিন কংগ্রেসে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবও পাস হয়েছিল।

  • ফ্রান্সের দৃঢ় সমর্থন: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ভারত সফরে এসে বলেন, “বিশ্বশান্তির ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য হিসেবে দেখা উচিত।”

  • রাশিয়ার নীরব সমর্থন: রাশিয়া প্রকাশ্যে না বললেও ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ লাভের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি।

বাস্তবতা: স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝখানে ভারত

ভারত আজও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে পারেনি, কারণ বাস্তবতা খুবই কঠিন।

  • P5-এর স্বার্থরক্ষা: বর্তমান স্থায়ী সদস্যরা (P5) নিজেদের ক্ষমতা ভাগ করে নিতে চায় না। কারণ, স্থায়ী সদস্যপদ মানে ভেটো ক্ষমতা—বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।

  • সংস্কার না হওয়া এক কঠিন বাস্তবতা: জাতিসংঘের সংস্কার প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে অচল। পঞ্চাশের দশকে তৈরি নিয়মাবলী আজও বদলায়নি। ভারতের মতো দেশ যেখানে চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে, সেখানে এখনও UNSC-তে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না!

  • ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: বিশ্ব রাজনীতির পালাবদলে ভারত স্থায়ী সদস্যপদ পেতে পারে, তবে তার জন্য দরকার জোরালো কূটনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন।

United Nations | Review: India in the United Nations: Interplay of Interests and Principles by C.S.R. Murthy - Telegraph India

ভারতের UNSC-তে স্থায়ী সদস্য হওয়া শুধুই ক্ষমতার স্বপ্ন নয়, এটি আন্তর্জাতিক মর্যাদার প্রশ্ন। কিন্তু চীনের বাধা, P5-এর একচেটিয়া ক্ষমতা এবং সংস্কারের অভাবে এই স্বপ্ন এখনও অধরা। ভারত কি ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক কূটনীতির দাবায় স্থায়ী সদস্যের আসন দখল করতে পারবে, নাকি এই লড়াই অন্তহীন হয়ে থাকবে?

জাতিসংঘে ভারতের অবদান: শান্তিরক্ষা থেকে মানবাধিকার রক্ষা পর্যন্ত

ভারত জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের প্রথম দিন থেকেই বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণে ভারতের মতো বিশাল রাষ্ট্র কি শুধুই শান্তিরক্ষার সৈনিক হয়ে থাকবে, নাকি নীতিনির্ধারণের মঞ্চে নিজের জায়গা ছিনিয়ে নেবে? ভারতের অবদানকে ঘিরে এই বিতর্ক আজও প্রাসঙ্গিক।

UN leadership, developing countries hail India's contribution to global good | Latest News India - Hindustan Times

শান্তিরক্ষায় ভারতের নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকা: অস্ত্র নয়, আশ্বাস

ভারত শান্তিরক্ষা মিশনে তার নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত।

  • প্রথম শান্তিরক্ষা মিশন: ১৯৫০ সালে কোরিয়া যুদ্ধের পর জাতিসংঘের আহ্বানে ভারত শান্তিরক্ষার দায়িত্বে এগিয়ে আসে। সেই শুরু, এরপর থেকে ভারত কখনও পিছিয়ে থাকেনি।

  • ৭০ বছরের অঙ্গীকার: আজ পর্যন্ত ভারত প্রায় ৫০টিরও বেশি শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষায় কর্মরত সেনার সংখ্যায় ভারত অন্যতম বৃহৎ অবদানকারী দেশ।

  • উল্লেখযোগ্য মিশন:

    • কঙ্গো (1960): গৃহযুদ্ধের সময় ভারতের সেনারা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিল।

    • সুদান (2005): দক্ষিণ সুদানের সংঘাতে ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সাহায্য করে।

    • লেবানন ও সাইপ্রাসে মিশন: ভারতীয় সেনারা দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত।

  • নারী শান্তিরক্ষীদের বিশেষ ভূমিকা: ২০০৭ সালে ভারত জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো ‘অল-উইমেন ফোর্স’ পাঠিয়েছিল, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত লাইবেরিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনে। এটি ছিল জাতিসংঘের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

মানবাধিকারের পক্ষে ভারতের কণ্ঠস্বর: নীরব সহমর্মিতা নয়, জোরালো প্রতিবাদ

জাতিসংঘে ভারত শুধু সৈন্য পাঠিয়েই দায়িত্ব সারেনি, বরং মানবাধিকার রক্ষায়ও এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।

  • আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সনদে ভারতের ভূমিকা: ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (UDHR) গ্রহণের সময় ভারত তার পক্ষে জোরালোভাবে সওয়াল করেছিল।

  • রোহিঙ্গা সংকটে ভারতের অবস্থান: ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভারত সরব হয়।

  • প্যালেস্টাইন ইস্যুতে ভারতের নীতিবোধ: জাতিসংঘে প্যালেস্টাইনের পক্ষে ভারত বরাবরই মানবিক সমর্থন জানিয়েছে, যা অনেক বড় শক্তির বিরুদ্ধেই গিয়েছে।

  • মানব পাচার ও শোষণ রোধে ভূমিকা: ভারত জাতিসংঘের Blue Heart Campaign’-এ অংশগ্রহণ করে মানব পাচারের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

Blue Heart Campaign

পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে ভারতের প্রচেষ্টা: শক্তিশালী অথচ শান্তিপ্রিয়

পরমাণু শক্তিধর হয়েও ভারত সর্বদা বিশ্বজুড়ে নিরস্ত্রীকরণে সোচ্চার থেকেছে।

  • NPT ও CTBT নিয়ে দ্বন্দ্ব: ভারত পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে বিশ্বাসী হলেও ১৯৬৮ সালের Non-Proliferation Treaty (NPT)-তে স্বাক্ষর করেনি। কারণ, এই চুক্তি পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর (P5) স্বার্থরক্ষা করে, অন্য দেশগুলোর উপর বিধিনিষেধ চাপায়।

  • পরমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে নীতিবাক্য: ১৯৯৮ সালে পরমাণু পরীক্ষা করেও ভারত বলেছিল, “নো ফার্স্ট ইউজ” নীতিতে তারা অটল থাকবে।

  • নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে ভারত: জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ কমিশনে ভারত পরমাণু অস্ত্রের সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণের দাবি তোলে।

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচনে ভারতের সক্রিয় ভূমিকা: অনুদান থেকে অংশীদারিত্ব

জাতিসংঘের ‘Sustainable Development Goals (SDGs)’ অর্জনে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

  • দারিদ্র্য বিমোচন: জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫-২০২৩ সময়কালে ভারত ২৩ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে, যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।

  • মহামারিতে ভারত: কোভিড-১৯ মহামারির সময় ভারত ‘Vaccine Maitri’ উদ্যোগে ১০০টিরও বেশি দেশে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছিল, যা জাতিসংঘে প্রশংসিত হয়।

  • আফ্রিকায় মানবিক সহায়তা: জাতিসংঘের আহ্বানে ভারত ইথিওপিয়া, সোমালিয়া এবং দক্ষিণ সুদানে খাদ্য ও ঔষধ পাঠিয়েছিল।

পরিবেশ সংরক্ষণে ভারতের নেতৃত্ব: সবুজ পৃথিবীর জন্য গ্রিন ডিপ্লোম্যাসি

বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্কে ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

  • ‘International Solar Alliance (ISA)’: ভারত ও ফ্রান্স মিলে জাতিসংঘের অধীনে এই সংস্থা গঠন করে, যা সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

  • জাতিসংঘ পরিবেশ পুরস্কার: ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা (UNEP) থেকে ‘Champion of the Earth’ পুরস্কার পান, যা ভারতের পরিবেশ রক্ষায় দায়বদ্ধতার স্বীকৃতি।

  • প্লাস্টিক দূষণ রোধে ভারত: জাতিসংঘের ‘Beat Plastic Pollution’ অভিযানে ভারত সর্বোচ্চ অংশীদার।

জাতিসংঘে ভারতের অবদান শুধু সৈনিক পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারত তার জনবল, কূটনৈতিক শক্তি, মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের অঙ্গীকারের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—অবদানকারীর জায়গা থাকলেও কি ভারতের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার নেই?

Rio Blog - UN World Environment Day 2018: Beat Plastic Pollution

জাতিসংঘে ভারতের ভবিষ্যৎ ভূমিকা: সম্ভাবনা কতটা উজ্জ্বল?

ভারতের জাতিসংঘে ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। প্রশ্নটা হলো, অবদানের পাল্লা ভারী হলেও, কি ভারত কখনও স্থায়ী সদস্যপদ পাবে? নাকি শুধুই শান্তিরক্ষায় নির্ভরযোগ্য সৈনিক হয়ে থেকে যাবে? এই জটিল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ভারতের ভূমিকাকে নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করতে হয়।

স্থায়ী সদস্যপদের দাবিতে ভারতের লড়াই: অবদানের স্বীকৃতি নাকি অবহেলা?

ভারত জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার দাবিদার দীর্ঘদিন ধরেই। কিন্তু এই দাবির পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত রয়েছে।

  • অবদান বনাম অধিকার: ভারত জাতিসংঘে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠিয়েছে। অথচ, নীতিনির্ধারণের মঞ্চে তার কোনো স্থায়ী আসন নেই। প্রশ্ন উঠেছে—অবদান দেওয়া গেলেও, অধিকার পাওয়া কেন নয়?

  • জি-৪ গ্রুপে ভারতের কণ্ঠস্বর: ভারত, জার্মানি, জাপান এবং ব্রাজিল মিলে জি-৪ গ্রুপ গঠন করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদের দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু চীন এবং আমেরিকার বিরোধিতায় এই দাবি এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

  • চীনের বাধা: চীন জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার পথ রুদ্ধ করতে বারবার বাধা সৃষ্টি করেছে। কূটনীতির এই রণাঙ্গনে ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন।

Chronicle of Conflict: The India-China border dispute from 1950 to 2024 - CNBC TV18

নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের অস্থায়ী সদস্যপদ: মহাকাশে পা রাখা, মাটিতে পড়ে থাকা?

ভারত ইতোমধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আটবার অস্থায়ী সদস্যপদ লাভ করেছে (শেষবার ২০২১-২২ সালে)।

  • অস্থায়ী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব: ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছিল এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিল।

  • স্থায়ী সদস্যপদের প্রশ্ন: তবে প্রশ্ন হলো, এতবার অস্থায়ী সদস্য হওয়া সত্ত্বেও কি ভারত চিরকালই ‘অস্থায়ী’ থেকে যাবে?

  • প্রভাবশালী দেশগুলির দ্বিমুখী নীতি: আমেরিকা একদিকে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক মজবুত করছে, অথচ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের প্রশ্নে নিরবতা পালন করছে।

বিশ্ব কূটনীতিতে ভারতের শক্তিশালী অবস্থান: সম্ভাবনার দরজা খুলবে?

ভারত আজ আর শুধুই উন্নয়নশীল দেশ নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত।

  • চীন-পাকিস্তান ইস্যুতে ভারত: জাতিসংঘে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে এবং চীনকে জইশ-ই-মোহাম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে ‘গ্লোবাল টেররিস্ট’ ঘোষণা করার জন্য চাপ দিয়েছে।

  • জলবায়ু নেতৃত্বে ভারত: ২০২১ সালের কপ২৬ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্য করার ঘোষণা দেন। এটি জাতিসংঘের প্ল্যাটফর্মে ভারতের শক্তিশালী নেতৃত্বের পরিচয়।

  • মধ্যস্থতাকারী ভারত: রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে ভারত মধ্যস্থতা করার চেষ্টা চালিয়েছে, যা ভারতের বিশ্ব কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানকে তুলে ধরে।

জাতিসংঘ সংস্কারে ভারতের দাবি: পুরনো কাঠামো, নতুন পৃথিবী

জাতিসংঘের বর্তমান কাঠামো বহু পুরনো, যা বিশ্বরাজনীতির বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না।

  • পঞ্চশক্তির আধিপত্য: জাতিসংঘের P5 (Permanent 5) সদস্য—আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে।

  • ভারতের যুক্তি: ভারতের দাবি, বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বিচারে এই কাঠামোতে পরিবর্তন আনা জরুরি। ২১ শতকের পৃথিবীতে ১৯৪৫ সালের নিরাপত্তা পরিষদ কাঠামো অচল।

  • G20 প্রেসিডেন্সিতে ভারতের ভূমিকা: ২০২৩ সালে ভারতের G20 সভাপতিত্বকালে জাতিসংঘ সংস্কারের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল, যা ভারতের ভবিষ্যৎ দাবিকে আরও জোরালো করে তোলে।

বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির পথ দেখায় ভারতের জি20 প্রেসিডেন্সি

পরিবেশ, প্রযুক্তি ও মানবাধিকারে ভারতের নেতৃত্ব: ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল?

জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ পরিমণ্ডলে পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • পরিবেশ সংরক্ষণে নেতৃত্ব: ভারতের ‘Mission LiFE (Lifestyle for Environment)’ ক্যাম্পেইন জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।

  • উদীয়মান প্রযুক্তি শক্তি: জাতিসংঘের ফোরামে ডিজিটাল গভর্ন্যান্স এবং সাইবার সিকিউরিটি-তে ভারতের ভূমিকা বাড়ছে।

  • মানবাধিকার রক্ষায় ভারত: জাতিসংঘে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ভারত স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের কণ্ঠকে আরও বলিষ্ঠ করে তুলতে পারে।

জাতিসংঘে ভারতের অবদান নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—অবদানই কি যথেষ্ট, নাকি ভারতকে নীতিনির্ধারণের আসনে বসতেই হবে? ভবিষ্যতে ভারত তার অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এবং মানবিক শক্তি দিয়ে জাতিসংঘে আরও বড় ভূমিকা নেবে—এটাই সময়ের দাবি।

Mission LiFE | Maharashtra Pollution Control Board

ভারতের ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক কূটনীতি: চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা

বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনে ভারতের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক ভূমিকা ঠিক কতটা প্রভাবশালী হবে? চলমান ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ভারত কি সত্যিই মধ্যস্থতাকারী হয়ে উঠবে, নাকি কেবলমাত্র একটি কৌশলগত শরিক হিসেবেই থেকে যাবে? ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে বলার আগে ভারতের বর্তমান ভূমিকা, সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করা জরুরি।

ভারতের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান: মধ্যস্থতাকারী না পক্ষপাতদুষ্ট?

ভারতের বহির্বিশ্বে অবস্থান আজ দ্বিমুখী। একদিকে নীতিগত নিরপেক্ষতা, অন্যদিকে কৌশলগত মিত্রতা—এই দ্বিধার মধ্যেই ভবিষ্যৎ কূটনীতি গড়ে উঠছে।

  • অবস্থানগত কৌশল: ভারত দীর্ঘদিন ধরে নিরপেক্ষ অবস্থান (Non-Aligned Movement)-এর নীতিতে অটল ছিল। কিন্তু বর্তমান ভূ-রাজনীতিতে এই নিরপেক্ষতা ধীরে ধীরে কৌশলগত পক্ষপাতিত্বে রূপ নিচ্ছে।

  • রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে ভারসাম্য রক্ষা: যুদ্ধ চলাকালীন ভারত রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রেখেছে, অথচ পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও অটুট রেখেছে।

  • চীনের আগ্রাসন ও ভারতের প্রতিক্রিয়া: ভারত চীনের আগ্রাসনের মোকাবিলায় QUAD গোষ্ঠীর (ভারত, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া) অংশ হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও স্পষ্ট করবে।

কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারতের উদয়: জি২০ এবং ব্রিক্সে প্রভাব

ভারত আজ আর শুধুমাত্র একটি উন্নয়নশীল দেশ নয়; বরং বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে তার কূটনৈতিক অবস্থানও ক্রমশ সুদৃঢ় হচ্ছে।

  • জি২০-তে ভারত: ২০২৩ সালে ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। ভারতের নেতৃত্বে ‘নয়াদিল্লি ঘোষণাপত্র’ পাস হয়, যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পক্ষপাতহীন অবস্থান নেওয়া হয়েছিল।

  • ব্রিক্সে ভারতের শক্তি: ব্রিক্স (BRICS: ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা) গোষ্ঠীতে ভারত বিকাশশীল দেশগুলির স্বার্থ রক্ষার পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠ হয়ে উঠেছে। এটি ভবিষ্যতে ভারতের কূটনৈতিক শক্তিকে আরও প্রভাবশালী করে তুলবে।

  • আফ্রিকায় ভারতের বিস্তার: পশ্চিমা দেশগুলির তুলনায় ভারত আফ্রিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক দৃঢ় করছে, যা জাতিসংঘে ভারতের কণ্ঠকে আরও শক্তিশালী করবে।

ভারতের জন্য ব্রিকস অপরিহার্য

কৌশলগত অংশীদারিত্ব: ভবিষ্যৎ কূটনীতির রূপরেখা

ভারতের ভবিষ্যৎ কূটনীতি মূলত তার কৌশলগত অংশীদারিত্বের উপর নির্ভর করবে।

  • আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত বন্ধন: ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক ক্রমশ মজবুত হচ্ছে। প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে দুই দেশের অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

  • রাশিয়ার সঙ্গে পুরনো মিত্রতা: রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক এখনও অটুট, বিশেষত প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়ার প্রযুক্তির ওপর ভারতের নির্ভরতা ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক বজায় রাখবে।

  • ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে জোট: ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য ও পরিবেশ সংক্রান্ত চুক্তি আরও মজবুত করছে, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।

চ্যালেঞ্জ: চীনের আধিপত্য এবং আঞ্চলিক টানাপোড়েন

ভারতের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক যাত্রায় চীনের প্রভাব এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

  • চীনের আগ্রাসন: ভারতকে বারবার লাদাখ, অরুণাচল সীমান্তে চীনের আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ভারত-চীন সম্পর্ককে আরও জটিল করবে।

  • OBOR-এর প্রভাব: চীনের One Belt One Road (OBOR) প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়ছে, যা ভারতের কূটনৈতিক পরিকল্পনায় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

  • পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক: ভারতের জন্য পাকিস্তানও একটি চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ তৈরি করলেও, এই দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের জন্য জটিলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

One Belt One Road (OBOR) business network. Source: Sheu and Kundu [8]. | Download Scientific Diagram

টেকসই উন্নয়ন এবং জলবায়ু কূটনীতি: ভারতের নতুন মঞ্চ

আগামী দিনে জলবায়ু কূটনীতি ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।

  • নবায়নযোগ্য শক্তিতে নেতৃত্ব: ভারত International Solar Alliance (ISA)-এর নেতৃত্বে আছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভারতের ভূমিকা আন্তর্জাতিক স্তরে বাড়াবে।

  • জলবায়ু তহবিল: ভারত COP28-এ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য তহবিলের দাবি তুলেছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের কণ্ঠস্বরকে আরও দৃঢ় করবে।

  • জলবায়ু শরণার্থী সমস্যা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ এবং উপকূলীয় দেশগুলি থেকে শরণার্থীর প্রবাহ বাড়তে পারে, যা ভারতের জন্য কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।

চ্যালেঞ্জ যতই থাক, ভারতের কূটনৈতিক অগ্রযাত্রা থেমে নেই। বিশ্ব কূটনীতিতে ভারত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নয়, বরং নীতিনির্ধারক শক্তি হয়ে উঠতে প্রস্তুত। ভারতের লক্ষ্য শুধু আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করা নয়, বরং জলবায়ু, প্রযুক্তি এবং মানবাধিকার ইস্যুতে বিশ্ব নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে ভারতের এই ভূমিকা নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

বাংলার মানুষের জন্য জাতিসংঘে ভারতের ভূমিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

“যদি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের কণ্ঠস্বর প্রবল হয়, তবে বাংলার স্বপ্নও কি আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে?”—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ভারতের জাতিসংঘে ভূমিকার গভীরে প্রবেশ করতে হয়। কারণ জাতিসংঘের নীতিনির্ধারণে ভারতের শক্তিশালী উপস্থিতি বাংলার মানুষের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

জাতিসংঘে ভারতের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর: বাংলার স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার

ভারত জাতিসংঘে কেবল একটি সদস্য রাষ্ট্র নয়; বরং উন্নয়নশীল বিশ্বের মুখপাত্র। এর ফলে বাংলার মতো রাজ্যেরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হয়।

  • জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলার সুরক্ষা: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন এবং গ্রামাঞ্চলে পরিবেশগত বিপর্যয় বাংলার কৃষি ও জীবিকা ধ্বংস করছে। জাতিসংঘে ভারত জলবায়ু ন্যায়বিচারের পক্ষ নিয়ে বারবার উন্নত দেশগুলির দায়িত্বের প্রশ্ন তুলেছে। এর ফলে বাংলার মতো উপকূলবর্তী অঞ্চলে জলবায়ু তহবিল পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

  • শরণার্থী ইস্যুতে ভারতের জোরালো ভূমিকা: বাংলায় অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং শরণার্থী সমস্যা দীর্ঘদিনের। জাতিসংঘে ভারত বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে, যা সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলার অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ভারতের কূটনৈতিক নীতি

জাতিসংঘে ভারতের ভূমিকা শুধুমাত্র নীতিগত বক্তব্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি বাংলার অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায়ও কার্যকর ভূমিকা রাখে

  • বাণিজ্যিক স্বার্থ: জাতিসংঘে ভারতের প্রভাবশালী অবস্থান বিশ্ববাজারে বাংলার পণ্য রফতানির পথ প্রশস্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, জাতিসংঘের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতীয় পাট ও হ্যান্ডলুম শিল্পের অগ্রাধিকার থাকায় বাংলার মেটিয়াব্রুজের জুট মিল এবং শান্তিপুর-ফুলিয়ার তাঁত শিল্পের চাহিদা বাড়ে

  • বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ: জাতিসংঘে ভারতের ভূমিকায় উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগে প্রাধান্য লাভ হয়, যার সুফল বাংলাও পায়। বিশেষ করে, বাংলায় তথ্যপ্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসারে আন্তর্জাতিক তহবিল পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

Ruchira Kamboj is India's first woman permanent representative at the United Nations | South Asia Monitor

শান্তি ও নিরাপত্তা: বাংলার নিরাপত্তায় জাতিসংঘে ভারতের সক্রিয়তা

বাংলার সীমান্তবর্তী অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক অস্থিরতা তাকে বিশেষভাবে সংবেদনশীল করে তোলে।

  • সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারতের কণ্ঠস্বর: জাতিসংঘে ভারত বারবার সন্ত্রাসবাদ দমন নীতিতে কড়া অবস্থান নিয়েছে, যা বাংলার সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান বাংলার সীমান্তবর্তী জেলাগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে

  • শান্তিরক্ষায় ভারত: জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলার বহু সৈনিক যুক্ত, যা বাংলার তরুণ প্রজন্মের জন্য আন্তর্জাতিক চাকরির দরজা খুলে দেয়।

বাংলার সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: জাতিসংঘে ভারতের সাংস্কৃতিক দূতিয়ালি

ভারত জাতিসংঘে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কূটনীতি নয়, বরং সংস্কৃতি রক্ষায়ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে বাংলার সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে।

  • বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় বাংলা: ইউনেস্কো (UNESCO) জাতিসংঘের অন্যতম শাখা, যেখানে ভারতের চাপেই দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, শান্তিনিকেতন এবং দুর্গাপুজোকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

  • বাংলার ভাষা ও সাহিত্য প্রসার: ভারতের সাংস্কৃতিক কূটনীতির ফলে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিও ভারত একাধিকবার তুলেছে, যা ভবিষ্যতে বাংলাকে আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা এনে দিতে পারে।

জলবায়ু ন্যায়বিচারে ভারতের লড়াই: বাংলার ভবিষ্যৎ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ

সুন্দরবন বা উপকূলবর্তী গ্রামগুলি যখন সমুদ্রের গ্রাসে বিলীন হতে বসেছে, তখন ভারতের জাতিসংঘে জলবায়ু সংক্রান্ত অবস্থান বাংলার ভবিষ্যৎ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

  • জলবায়ু তহবিলের দাবি: ভারত জাতিসংঘে বারবার উন্নত দেশগুলির কাছ থেকে জলবায়ু তহবিলের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। এর ফলে বাংলার উপকূলবর্তী অঞ্চলে পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য তহবিল পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

  • জলবায়ু উদ্বাস্তু সমস্যা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলায় শরণার্থীর ঢল বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘে ভারতের অবস্থান জলবায়ু উদ্বাস্তু সমস্যা মোকাবিলায় বাংলার স্বার্থকে রক্ষা করতে পারে।

CusRM 52459230909014816 04 g20 summit 090923 scaled

ভারতের জাতিসংঘে শক্তিশালী অবস্থান বাংলার মানুষের জন্য শুধু নীতিগত নয়, বরং বাস্তবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু সংকট, অর্থনৈতিক উন্নতি, সাংস্কৃতিক মর্যাদা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা—এই চারটি প্রধান ক্ষেত্রে ভারতের আন্তর্জাতিক ভূমিকা সরাসরি বাংলার স্বার্থকে প্রভাবিত করে। ভবিষ্যতে জাতিসংঘে ভারতের আরও সক্রিয়তা বাংলার উন্নয়নের দিগন্তকে আরও প্রসারিত করবে।

ভারতের জাতিসংঘে প্রভাবশালী অবস্থান—বাংলার স্বার্থরক্ষার আশার আলো

ভারতের জাতিসংঘে শক্তিশালী ভূমিকা কেবল আন্তর্জাতিক কূটনীতির অঙ্গ নয়, বরং বাংলার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রেও কার্যকর হাতিয়ার। জলবায়ু পরিবর্তন, শরণার্থী সংকট বা অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার—প্রতিটি ইস্যুতেই ভারতের সক্রিয় অবস্থান বাংলার মানুষের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনে। ভবিষ্যতে জাতিসংঘে ভারতের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেলে বাংলার স্বার্থরক্ষার সম্ভাবনাও বহুগুণে বাড়বে

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply