“ছাঁভা”—একটি সিনেমা নয়, এটি এক মহাকাব্য! রূপোলি পর্দায় যখন ইতিহাস জীবন্ত হয়ে ওঠে, তখন দর্শক শুধু চোখে নয়, হৃদয় দিয়েও অনুভব করেন সেই মুহূর্তগুলো। “ছাঁভা” এমনই এক দুর্দান্ত সৃষ্টি, যেখানে রক্ত, ঘাম, দেশপ্রেম আর আত্মত্যাগের মহিমা একসঙ্গে মিশে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক তৈরি করেছে।ছবিটি পরিচালনা করেছেন লক্ষ্মণ উতেকর। প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছে ম্যাডক ফিল্মসের অধীনে দীনেশ বিজন। ছবির সাউন্ডট্র্যাক এবং স্কোর পরিচালনা করেছেন অস্কারজয়ী সুরকার এ.আর. রহমান। গানগুলোর কথা লিখেছেন ইরশাদ কামিল।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ মুক্তি পেয়েছে ‘ছাঁভা’। হ্যাঁ, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে প্রেমের সিনেমার বদলে দেশপ্রেম আর বীরত্বের গল্প নিয়ে বড় পর্দায় হাজির হয়েছে এই মুভি!
বক্স অফিস কালেকশন – রেকর্ড ব্রেকিং সাফল্য
সিনেমার মুক্তির প্রথম দিন থেকেই প্রেক্ষাগৃহের বাইরে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। শহর হোক বা মফস্বল—প্রতিটি হলে ‘ছাঁভা’-র টিকিট যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছিল। একদিকে ইতিহাসপ্রেমী দর্শকের আবেগ, অন্যদিকে সম্ভাজি মহারাজের জীবনগাথার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা—সব মিলিয়ে সিনেমাটি মুক্তির প্রথম দিনেই রেকর্ড পরিমাণ দর্শক টানতে সক্ষম হয়।
প্রথম দিনের আয়:
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, মুক্তির প্রথম দিনেই ছবিটি ₹৩৫-৪০ কোটি টাকার বিশাল আয় করেছে, যা সাম্প্রতিককালে ভারতীয় ঐতিহাসিক সিনেমার মধ্যে অন্যতম সেরা উদ্বোধনী আয়। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের হলগুলোতে দর্শকের ঢল নেমেছিল।
প্রথম সপ্তাহে অভাবনীয় সাফল্য:
মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ₹২০০ কোটির বেশি ব্যবসা করে ‘ছাঁভা’, যা বলিউডের সাম্প্রতিক ঐতিহাসিক ছবিগুলোর তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য রেকর্ড। অনেক সমালোচকের মতে, ছবিটির ব্যতিক্রমী গল্প ও দুর্দান্ত নির্মাণশৈলীর কারণে দর্শকের রেসপন্স প্রথম দিনের পরেও অব্যাহত থাকে।
ভারত এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব:
শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও ‘ছাঁভা’ তুমুল সাড়া ফেলেছে। ইউকে, ইউএসএ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই সিনেমাটি ₹৭০ কোটি-এর বেশি আয় করে। বিশেষ করে ভারতীয় প্রবাসী দর্শকের কাছে ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
মহারাষ্ট্রে দর্শকদের উন্মাদনা:
মহারাষ্ট্রে ছবিটি যেন এক আলাদা আবেগের জন্ম দেয়। বিশেষত পুনে, মুম্বাই, নাসিক, সাতারা, কোলাপুরের মতো শহরগুলোতে প্রতিটি শো ছিল হাউসফুল। অনেক জায়গায় মধ্যরাতেও বিশেষ শো চালাতে হয় দর্শকের চাহিদার কারণে। কিছু স্থানে হল মালিকরা ভোর ৫টায় বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের আয়োজন করেন, যা সাধারণত শুধু ব্লকবাস্টার সিনেমাগুলোর ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
দ্বিতীয় সপ্তাহেও অপ্রতিরোধ্য গতি:
অনেক সময় প্রথম সপ্তাহের পরে বক্স অফিস কালেকশন কমে যায়, কিন্তু ‘ছাঁভা’-র ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা ঘটে। দ্বিতীয় সপ্তাহেও ছবিটি ₹৩৫০ কোটি ছাড়িয়ে যায় এবং আরও বেশি দর্শক হলে আসতে শুরু করেন। বিশেষ করে ওয়ার্ড অফ মাউথ-এর কারণে যারা প্রথম দিকে ছবিটি না দেখেছিলেন, তারাও আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
মাসব্যাপী রাজত্ব এবং সর্বকালের রেকর্ড:
এক মাসের মধ্যে ‘ছাঁভা’ ভারতের অন্যতম ব্যবসাসফল ঐতিহাসিক সিনেমার তালিকায় স্থান করে নেয়। ছবিটি ₹৫৫০ কোটির বেশি আয় করে, যা অনেক সুপারহিট ঐতিহাসিক ছবির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এর আগে ‘বাজিরাও মস্তানি’, ‘তানাজি’ এবং ‘পদ্মাবত’-এর মতো ছবিগুলোর যা বক্স অফিস পারফরম্যান্স ছিল, তা এই ছবির তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে যায়।