বরুণ চক্রবর্তী—এক অনিশ্চিত স্বপ্নের নাম, যা বহু বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। ক্রিকেট বিশ্বে অনেক খেলোয়াড় এসেছেন, কেউ আলো ছড়িয়েছেন, আবার কেউ হারিয়ে গেছেন সময়ের স্রোতে। তবে কিছু গল্প থেকে যায়, কিছু অধ্যায় ইতিহাস হয়ে ওঠে। বরুণ চক্রবর্তীর ক্রিকেট ক্যারিয়ারও তেমনই এক অনুপ্রেরণার কাহিনি। একসময় যাঁকে সবাই শুধুই “মিস্ট্রি স্পিনার” বলে চিনত, তাঁর ক্রিকেট-জীবন শুরুই হয়েছিল দেরিতে। আর্কিটেকচার পড়া এক তরুণ, যার ব্যাট-বলের দুনিয়ায় আসার কথা ছিল না, তিনিই একদিন ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের জায়গা করে নিলেন।
সূচিপত্র
Toggleএকটি স্বপ্ন, একটি লড়াই, একটি পুনর্জন্ম—বরুণ চক্রবর্তীর জীবনগাথা
বরুণ চক্রবর্তীর জীবন একেবারে সাধারণ ছিল না, বরং সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়ে দেয়। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন এক শান্তশিষ্ট, নিরীহ ছেলেটি, যে স্বপ্ন দেখত বড় কিছু করার। তামিলনাড়ুর কোনোরকম কোলাহলহীন এক শহরে তাঁর বেড়ে ওঠা। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ছিল প্রবল, কিন্তু সেটাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা তখন ভাবেননি।
ছোটবেলায় গলির ক্রিকেট খেলতে খেলতেই তাঁর স্পিনের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। বাবা-মা তাঁকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বলতেন, কারণ তারা চেয়েছিলেন ছেলে যেন স্থিতিশীল কোনো পেশায় যায়। সেই কারণে ক্রিকেটের পরিবর্তে পড়াশোনার দিকেই বেশি মন দিলেন বরুণ। আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন, ভাবলেন একদিন বড় মাপের স্থপতি হবেন। কিন্তু ভাগ্যের চাকা অন্যদিকে ঘুরছিল।
যখন আর্কিটেকচারের কাজ শুরু করলেন, তখন বুঝতে পারলেন—এটা তাঁর জন্য নয়। মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ক্রিকেটের ভালোবাসা তখন প্রবল হয়ে উঠল। জীবনের এই মোড়ে এসে তিনি সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন—স্থপতির চাকরি ছেড়ে একেবারে ক্রিকেটের জগতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন!
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মোটেও সহজ ছিল না। বয়স তখন ২৫ ছুঁই ছুঁই, যখন অনেক ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার গড়ে ওঠে, তখনই তিনি নতুন করে শুরু করলেন। প্রথম দিকে বল হাতে নিতেই সমস্যায় পড়লেন। উইকেট পাচ্ছিলেন না, দলে সুযোগও মিলছিল না। কিন্তু হার না মানার এক গুণ ছিল বরুণের মধ্যে। একের পর এক পরীক্ষা দিতে থাকলেন, নিজেকে আরও শাণিত করতে থাকলেন।
এরপরই এল সেই মোড় ঘোরানো মুহূর্ত—তিনি আবিষ্কার করলেন নিজের অস্ত্র, ‘মিস্ট্রি স্পিন’!
তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তামিলনাড়ুর ঘরোয়া দলে সুযোগ পেলেন, তারপরে আইপিএলে নজর কাড়লেন। কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁকে দলে টানল, আর সেখানেই শুরু হল তাঁর স্বপ্নের উড়ান। অচেনা এক স্পিনার রাতারাতি ভারতীয় ক্রিকেটে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেন। তাঁর বলের রহস্য বুঝতে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা নাস্তানাবুদ হয়ে গেলেন।
কিন্তু ক্রিকেটে ভাগ্য সবসময় সহায় হয় না। যখন সবাই ধরে নিয়েছিল, এই ছেলেটাই ভারতের পরবর্তী বড় স্পিনার, তখনই এল এক কঠিন ধাক্কা। ২০২১ সালের সেই অভিশপ্ত ম্যাচ—দুবাইতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। সেই ম্যাচের পর যেন সব বদলে গেল।
২০২১-এর সেই অভিশপ্ত রাত—যখন স্বপ্ন ভেঙেছিল ভারুণ চক্রবর্তীর
ক্রিকেটের মঞ্চে কখনো কখনো এমন কিছু রাত আসে, যা বদলে দিতে পারে একজন খেলোয়াড়ের পুরো জীবন। কখনো তা জয়গাথায় পরিণত হয়, আবার কখনো তা হয়ে ওঠে এক দুঃস্বপ্ন, যা দীর্ঘদিন তাড়া করে ফেরে। ভারুণ চক্রবর্তীর জন্য ২০২১ সালের সেই রাত ছিল ঠিক তেমনই—এক অভিশপ্ত অধ্যায়, যেখানে তাঁর স্বপ্নগুলো যেন এক নিমেষে ভেঙে পড়েছিল।
মঞ্চ: দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
পরিস্থিতি: ভারত বনাম পাকিস্তান—বিশ্বকাপের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত দ্বৈরথ।
এই ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনার শেষ ছিল না। ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট দ্বৈরথ বরাবরই আবেগ, প্রত্যাশা আর ইতিহাসের বোঝা বইতে থাকে। তার ওপর ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছিল ভারতের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। আর সেই দলের অংশ ছিলেন এক নতুন সেনানী—ভারুণ চক্রবর্তী।
আইপিএলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। সবাই তাঁকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল। বলা হচ্ছিল, তাঁর মিস্ট্রি স্পিন হতে পারে ভারতের গোপন অস্ত্র। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা কীভাবে তাঁর ঘূর্ণিতে কাবু হবে, সেই আলোচনা চলছিল সংবাদমাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়া—সবখানে।
কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস, যেদিন সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল জাদুকরী পারফরম্যান্স, সেদিনই যেন সব ভুলে গিয়েছিলেন বরুণ।
বল হাতে নামলেন, চারদিকে উন্মাদনা। স্টেডিয়ামজুড়ে গর্জন। পাকিস্তানের দুই ওপেনার—বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান তখন ক্রিজে। ভারতীয় সমর্থকেরা আশায় ছিলেন, এবারই হয়তো বরুণ চক্রবর্তী নিজের ম্যাজিক দেখাবেন।
কিন্তু বাস্তব চিত্রটা ছিল একেবারে ভিন্ন। প্রথম ওভারেই বুঝতে পারলেন, উইকেটে সেই সাহায্য নেই, যা তিনি ভেবেছিলেন। গুগলি কিংবা ক্যারম বল—সবই পড়ে ব্যাটে আসছে সহজে। বাবর আজম আর রিজওয়ান সাবলীলভাবে খেলে যাচ্ছিলেন, যেন তাঁরা বরুণের প্রতিটি ডেলিভারি আগেই পড়ে ফেলেছেন!
একবারও ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করতে পারছিলেন না।
একবারও বিপদে ফেলতে পারছিলেন না পাকিস্তানকে।
যে রহস্যময়ী স্পিনের জন্য এতদিন পরিচিত ছিলেন, সেই মায়া যেন হারিয়ে গিয়েছিল!
ধীরে ধীরে ওভার যেতে লাগল। কিন্তু প্রতিটি বল যেন আশার প্রদীপ নিভিয়ে দিচ্ছিল। বাবর আজম তাঁর ওপর চড়াও হলেন, রিজওয়ানও কোনো সুযোগ দিলেন না। ম্যাচ যত এগোতে থাকল, ততই মনে হচ্ছিল, ভারতীয় দল যেন নিজেদের সব অস্ত্র হারিয়ে ফেলেছে।
ভারুণের প্রতিটি ওভার যেন ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে ভারতের পিছিয়ে পড়ার আরেকটি ধাপ হয়ে উঠছিল। অধিনায়ক বিরাট কোহলি বারবার তাঁকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন, কিন্তু সেদিন যেন কিছুই কাজে আসছিল না। বলের রহস্য উধাও হয়ে গিয়েছিল, আগ্রাসী পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের সামনে তিনি যেন দিশেহারা।
শেষ পর্যন্ত, কোনোরকম উইকেট না নিয়ে, কষ্টে ভরা এক স্পেল শেষ করলেন তিনি। তাঁর বোলিং ফিগার দাঁড়াল—৪ ওভার, ৩৩ রান, ০ উইকেট।
পরিসংখ্যানটা হয়তো খুব খারাপ দেখাচ্ছিল না, কিন্তু ম্যাচের যে পরিস্থিতি ছিল, তাতে এটি একেবারেই হতাশাজনক। পাকিস্তান অবলীলায় ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে দিল।
এটাই ছিল সেই রাত, যখন এক ক্রিকেটারের আত্মবিশ্বাস ভেঙে খান খান হয়ে গেল।
এটাই ছিল সেই রাত, যখন বরুণ চক্রবর্তী বুঝতে পারলেন—আন্তর্জাতিক ক্রিকেট একেবারেই আলাদা, এবং এখানে টিকে থাকতে গেলে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ভারতীয় ড্রেসিংরুমে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। কেউ কিছু বলছিল না। পুরো দল হতাশ। আর এক কোনায় বসে ছিলেন বরুণ, নিঃশব্দে, চুপচাপ। হয়তো নিজের বোলিংয়ের প্রতিটি মুহূর্ত মনে মনে বিশ্লেষণ করছিলেন। হয়তো ভেবেছিলেন, সুযোগ কি আবার আসবে?
২০২৫ সালের ২রা মার্চ – দুবাইয়ে ইতিহাস লিখলেন বরুণ চক্রবর্তী!
চার বছর আগের সেই অভিশপ্ত রাতের কথা কি ভুলে গিয়েছিলেন বরুণ চক্রবর্তী? নাহ, একেবারেই নয়! বরং সেই রাতের প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা ভুল, প্রতিটা যন্ত্রণা তাঁর হৃদয়ে এক গভীর ক্ষত তৈরি করেছিল। কিন্তু জীবন যেমন ভুলের শাস্তি দেয়, তেমনই একদিন ঠিকই সুযোগ এনে দেয় পুরনো ঋণ শোধ করার।
২০২৫ সালের ২রা মার্চ – চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চ, সেই একই দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম!
প্রতিপক্ষ: নিউজিল্যান্ড।
পরিস্থিতি: সেমিফাইনাল, জয় মানেই ফাইনাল, হার মানেই বিদায়।
ভারতের ব্যাটিং: সংগ্রামের মঞ্চে দৃঢ় প্রত্যয়
২রা মার্চ, ২০২৫। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল ম্যাচ। টস জিতে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে ছিল প্রতিকূল পরিস্থিতি, কিন্তু তাঁরা নিজেদের প্রতিভা ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।
শুরুতেই বিপর্যয়: ভারতের ইনিংসের সূচনা মোটেই সুখকর ছিল না। প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৩৭ রান তুলতেই ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারায় দলটি। শুভমান গিল, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।
শ্রেয়াস আইয়ারের প্রতিরোধ: এই কঠিন সময়ে ক্রিজে আসেন শ্রেয়াস আইয়ার। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৯৮ বলে ৭৯ রানের মূল্যবান ইনিংস। তাঁর ইনিংসে ছিল ৮টি চারের মার, যা দলের স্কোরকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে।
অক্ষর প্যাটেলের অবদান: অন্যদিকে, অক্ষর প্যাটেল ৫৫ বলে ৪২ রান করেন। তাঁর ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ১টি ছক্কার মার। শ্রেয়াস ও অক্ষরের মধ্যে ৫০ রানের পার্টনারশিপ দলের স্কোরকে সম্মানজনক স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
হার্দিক পান্ডিয়ার ঝোড়ো ইনিংস: শেষের দিকে হার্দিক পান্ডিয়া ৪৫ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন, যা দলের স্কোরকে বাড়িয়ে তোলে।
ম্যাট হেনরির বিধ্বংসী বোলিং: নিউজিল্যান্ডের পেসার ম্যাট হেনরি ৫ উইকেট নিয়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে চাপে ফেলেন। তাঁর বোলিং ফিগার ছিল ১০ ওভারে ৪২ রানে ৫ উইকেট।
সম্মিলিত সংগ্রাম: উপরোক্ত পারফরম্যান্সের ফলে ভারত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৯ রান সংগ্রহ করে। এই স্কোর পরবর্তীতে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভারতের ব্যাটসম্যানদের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রতিরোধী মনোভাবই দলের সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করে।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং, এবং বরুণের মায়াবী স্পিন—যেখানে ঘূর্ণির জাদুতে বাঁধা পড়ল কিউইরা
নিউজিল্যান্ড যখন ২৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামল, তখনও কেউ আঁচ করতে পারেনি, এক রহস্যময় স্পিনারের জালে তারা এতটা জড়িয়ে পড়বে! মাঠে তখন আলো-আঁধারির খেলা, দুবাই স্টেডিয়ামের উত্তপ্ত বাতাসে ভাসছিল টানটান উত্তেজনা। কিন্তু যেইমাত্র বল হাতে নিলেন বরুণ চক্রবর্তী, স্টেডিয়ামের আবহ যেন বদলে গেল!
প্রথম ওভারেই আঘাত! টম লাথাম বুঝতেই পারলেন না, বরুণের এক সুনিপুণ গুগলি সরাসরি তাঁর প্যাডে আঘাত হানল। আম্পায়ারের আঙুল ওঠার আগেই ভারতীয় খেলোয়াড়দের উল্লাস! এই উইকেট যেন ইঙ্গিত দিল—আজকের রাত বরুণের!
এরপর একে একে কিউই ব্যাটসম্যানরা হারিয়ে গেলেন সেই রহস্যময় স্পিনের জালে। গ্লেন ফিলিপস তাঁর চতুর ক্যারম বলে কাবু হয়ে বোল্ড হলেন, স্টাম্প ছিটকে গেল কয়েক গজ দূরে। আর সেই দৃশ্য দেখে ভারতীয় সমর্থকেরা গর্জন করলেন, যেন দুবাইয়ের বুকে ঝড় উঠেছে!
কিন্তু আসল শিকার তখনও বাকি! কেন উইলিয়ামসন, যিনি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং স্তম্ভ, তিনিও টিকতে পারলেন না বরুণের মায়াবী ঘূর্ণির সামনে।
একটি বিধ্বংসী স্পেল—৫ উইকেট!
বরুণের বোলিং স্পেল যেন এক যাদুর খেলা!
- ১ম ওভারে ১ রান দিয়ে ২ উইকেট
- ৩য় ওভারে ফের গুগলি, গ্লেন ফিলিপস বোল্ড!
- ৪র্থ ওভারে ক্যারম বল, নিশাম কিপারের হাতে ক্যাচ!
- ৫ম ওভারে সুইপ করতে গিয়ে স্যান্টনার এলবিডব্লিউ!
পুরো নিউজিল্যান্ড দল স্তব্ধ। বরুণ চক্রবর্তী ৪২ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন! এই পারফরম্যান্স ভারতকে ম্যাচে এক অপ্রতিরোধ্য অবস্থানে পৌঁছে দিল!
একটি দুর্দান্ত লেগ-ব্রেক, যা উইলিয়ামসন ভাবলেন অফ-সাইডে খেলবেন, কিন্তু বল মুহূর্তেই বাঁক নিল ভেতরের দিকে। কেএল রাহুল ক্ষিপ্রতার সঙ্গে স্টাম্পিং করলেন, আর উইলিয়ামসন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন! এমন বিভ্রান্তি তাঁর ব্যাটিং জীবনে খুব কমবারই এসেছে!
বরুণের স্পেল যেন এক মহাকাব্য রচনা করল। বল তাঁর হাত থেকে বেরোচ্ছে আর কিউই ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়ছে!
ফলাফল? নিউজিল্যান্ড ২০৫ রানে অলআউট!
এই এক রাতেই চার বছর আগের সেই ব্যর্থতা যেন মুছে গেল। আজ আর তিনি সেই ২০২১-এর দুবাইয়ের বিভ্রান্ত বরুণ নন, আজ তিনি এক পরিণত যোদ্ধা, যিনি নিজের হারানো সম্মান পুনরুদ্ধার করেছেন!
আর ম্যাচ শেষে যখন বরুণ চক্রবর্তী পুরস্কার নিতে উঠলেন, তখন স্টেডিয়ামজুড়ে ভারতীয় সমর্থকদের উল্লাস একটাই কথা বলছিল—
“এই দুবাইয়ের মাটিতেই একদিন হেরেছিলে, আজ এখানেই তুমি কিংবদন্তি হয়ে উঠলে!”
উপসংহার: বরুণ চক্রবর্তী – অধ্যবসায়ের এক প্রতীক
বরুণ চক্রবর্তীর জীবনগাথা শুধুই একজন ক্রিকেটারের সাফল্যের গল্প নয়, এটি অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস এবং স্বপ্ন পূরণের এক অনন্য উদাহরণ। আর্কিটেকচার থেকে ক্রিকেট, ব্যর্থতা থেকে সাফল্য—প্রতিটি অধ্যায়ই তাঁর লড়াইয়ের সাক্ষী। এক সময় যাঁকে শুধুই “মিস্ট্রি স্পিনার” বলে আখ্যা দেওয়া হতো, আজ তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের নির্ভরযোগ্য বোলারদের একজন।
২০২১ সালের হতাশার অধ্যায় পেরিয়ে ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স যেন প্রমাণ করল, কঠিন পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস থাকলে সব অসম্ভবই সম্ভব। তাঁর নিখুঁত লাইন-লেন্থ, বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং এবং প্রতিটি ডেলিভারিতে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা তাঁকে আরও অনন্য করে তুলেছে।
বরুণ চক্রবর্তীর যাত্রা শুধু একজন ক্রিকেটারের সাফল্যের প্রতিচ্ছবি নয়, বরং সকল তরুণ খেলোয়াড়ের জন্য এক অনুপ্রেরণা। জীবন যতই কঠিন হোক না কেন, লড়াই চালিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই—বরুণের কাহিনি সেটাই প্রমাণ করে। তাঁর এই অধ্যায় হয়তো এখানেই শেষ নয়, বরং আরও বড় মঞ্চের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে বরুণ চক্রবর্তী আজ শুধুই এক নাম নয়, বরং অধ্যবসায়ের এক প্রতীক!
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো