গোল্ড কার্ড—এই দুটি শব্দেই এখন সরগরম বিশ্ব রাজনীতি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ঘোষণায় অভিবাসনের মঞ্চে আলোড়ন উঠেছে। সদ্য প্রকাশিত ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা প্রোগ্রাম ঘিরে বিতর্কের ঝড় বইছে। পরিকল্পনাটি সহজ—যদি কেউ ৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪১৫ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেন, তবে তিনি কেবল যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না, বরং নাগরিকত্বের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবেন। অর্থাৎ, টাকা থাকলেই গ্রিন কার্ড পেতে আর কোনো বাধা নেই!
এই সুযোগ স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে ধনী বিনিয়োগকারীদের জন্য। তবে বড় প্রশ্ন হলো—এই নীতি কি কেবল পুঁজিপতিদের জন্য আমেরিকার দরজা খুলে দেবে? তাহলে সাধারণ দক্ষ কর্মী, শিক্ষার্থী বা মধ্যবিত্ত অভিবাসীদের কী হবে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘গোল্ডেন ভিসা’ ব্যবস্থার প্রচলন থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এটি প্রবল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন, এটি অর্থনীতিকে চাঙা করবে, বিনিয়োগ বাড়াবে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। অন্যদিকে, সমালোচকরা মনে করছেন, এই নীতি বৈষম্য আরও প্রকট করবে এবং আমেরিকান স্বপ্ন কেবল ধনীদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাবে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কতটা বাস্তবতা আছে? আর এতে আসলে কাদের লাভ হবে, কাদের ক্ষতি? আজ আমরা সেটাই বিশদে আলোচনা করব।
সূচিপত্র
Toggle‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা: এক সোনালি টিকিট, তবে কাদের জন্য?
আপনি যদি ধনী হন, হাতে থাকে মোটা অঙ্কের টাকা, তাহলে ট্রাম্পের এই ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা আপনার জন্য স্বপ্নের দুয়ার খুলে দিতে পারে। এটি কোনো সাধারণ ভিসা নয়, এটি যেন এক অভিজাত প্রবেশপত্র, যা আপনাকে সোজা আমেরিকার অর্থনৈতিক বৃত্তে জায়গা করে দেবে।
কীভাবে কাজ করবে এই ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা?
এই প্রোগ্রামের শর্ত বেশ সহজ—আপনাকে যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪১৫ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করতে হবে। এই বিনিয়োগ হতে পারে নতুন ব্যবসায়, স্টার্টআপে, বা এমন কোনো প্রকল্পে যা অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। শুধু তাই নয়, এটি ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বড় কর্পোরেশনগুলোর জন্যও উন্মুক্ত থাকবে।
এই ভিসার মাধ্যমে, বিনিয়োগকারীরা পাবেন—
✔ স্থায়ী বসবাসের অনুমতি (Green Card-এর মতো সুবিধা)।
✔ মুক্তভাবে কাজ ও ব্যবসার সুযোগ (যেকোনো সেক্টরে বিনিয়োগের স্বাধীনতা)।
✔ পরিবারসহ থাকার সুবিধা (পরিবারের সদস্যরাও এই ভিসার আওতায় আসতে পারবেন)।
✔ ভবিষ্যতে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ (নির্দিষ্ট সময় পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে)।
এই ভিসা কার্যত অর্থের বিনিময়ে ‘গ্রিন কার্ড’-এর শর্টকাট, যেখানে বিনিয়োগই মূল চাবিকাঠি।
বিনিয়োগ কোথায় করতে হবে?
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই ৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ শুধুমাত্র বড় বড় শহরেই নয়, বরং ছোট শহর এবং পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোর উন্নয়নেও কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে, এটি পুরোপুরি নিশ্চিত নয় যে, বিনিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট কোনো খাত নির্ধারণ করা হবে কিনা।
কিছু বিশেষ সেক্টর, যেমন—
রিয়েল এস্টেট: নতুন আবাসন প্রকল্প বা বাণিজ্যিক ভবনে বিনিয়োগ।
স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি: নতুন উদ্ভাবনী ব্যবসায় বিনিয়োগ করে মার্কিন প্রযুক্তি খাতে প্রবেশ।
উৎপাদন খাত: নতুন কারখানা স্থাপন বা বিদ্যমান উৎপাদন শিল্পের সম্প্রসারণ।
পরিবেশবান্ধব প্রকল্প: নবায়নযোগ্য শক্তি বা টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প।
এই বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য হলো মার্কিন অর্থনীতিতে অর্থপ্রবাহ বাড়ানো এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা।
কতদিন লাগবে এই ভিসা পেতে?
এখনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি সাধারণ অভিবাসী ভিসার তুলনায় অনেক দ্রুত অনুমোদিত হবে। যদি সব নথিপত্র ঠিকঠাক থাকে, তাহলে মাত্র ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই আবেদনকারী ও তার পরিবার আমেরিকায় বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন।
কেন ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ প্রোগ্রাম এত বিশেষ?
এই প্রোগ্রামকে সাধারণ অভিবাসন প্রক্রিয়ার তুলনায় অনন্য করে তুলেছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ঐতিহ্যগতভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস বা নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ দীর্ঘ ও জটিল। কর্মসংস্থানের ভিত্তিতে গ্রিন কার্ড পেতে হলে কঠোর প্রতিযোগিতা পার করতে হয়, পারিবারিক ভিত্তিতে অভিবাসন প্রক্রিয়া আবার সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ‘গোল্ড কার্ড’ প্রোগ্রাম সেই দীর্ঘ অপেক্ষার প্রাচীর ভেঙে দিতে পারে।
প্রথাগত EB-5 ইনভেস্টর ভিসার তুলনায় এটি অনেকটাই নমনীয় এবং লোভনীয়। EB-5 ভিসার জন্য আবেদনকারীদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় এবং সেই বিনিয়োগের ফলে ন্যূনতম দশজন মার্কিন নাগরিকের কর্মসংস্থান তৈরি হওয়া আবশ্যক। কিন্তু ট্রাম্পের এই নতুন প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় বিনিয়োগের শর্ত আরও উদারভাবে নির্ধারিত হতে পারে।
গোল্ড কার্ডের ক্ষেত্রে সম্ভবত বিনিয়োগকারীদের উপর এমন কোনো কঠোর শর্ত আরোপ করা হবে না যে, তারা আবশ্যিকভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন। এর পরিবর্তে, বিনিয়োগের পরিমাণকেই একমাত্র প্রধান যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। এর ফলে, যারা শুধুমাত্র মার্কিন অর্থনীতিতে বিশাল অঙ্কের অর্থ ঢালতে পারেন, তারা খুব সহজেই এই ভিসার আওতায় চলে আসবেন।
এছাড়া, প্রচলিত অভিবাসন প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ আবেদনকারীকে নির্দিষ্ট কিছু সেক্টরে দক্ষতা অর্জন করতে হয়, বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল বা চিকিৎসা ক্ষেত্রে। কিন্তু গোল্ড কার্ড এই জটিলতা দূর করবে, কারণ এখানে দক্ষতার চেয়ে মূল ফোকাস থাকবে বিনিয়োগের উপর। ফলে উচ্চশিক্ষা বা পেশাগত অভিজ্ঞতা এখানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে শুধুমাত্র বিনিয়োগকারী নন, বরং তার পরিবারের সদস্যরাও সরাসরি সুবিধা পেতে পারেন। প্রচলিত অভিবাসন ব্যবস্থায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য আলাদা আবেদন করতে হয়, যার জন্য অতিরিক্ত সময় লাগে এবং কিছু ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত পূরণ করতে হয়। কিন্তু গোল্ড কার্ড বিনিয়োগকারীর জীবনসঙ্গী ও সন্তানদের জন্যও একযোগে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের পথ সুগম করবে।
সব মিলিয়ে, এই বিশেষ পরিকল্পনাটি মূলত ধনী ব্যক্তিদের জন্য এক ব্যতিক্রমী সুযোগ এনে দিতে পারে। এটি কার্যত গ্রিন কার্ড পাওয়ার একটি সোনালি শর্টকাট, যেখানে দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রয়োজন নেই, বরং শুধুমাত্র আর্থিক সামর্থ্যই মূল নিয়ামক। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি হতে পারে অন্যতম ব্যয়বহুল এবং বিতর্কিত অভিবাসন নীতি, যা শুধু দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক আলোড়ন তুলতে পারে।
এই ভিসার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী?
যেকোনো বড় নীতির আড়ালে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল থাকে। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। এই প্রোগ্রাম শুধুমাত্র বিদেশি ধনী বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধার দ্বার খুলে দেবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে, এর গভীরে রয়েছে বেশ কিছু সুক্ষ্ম উদ্দেশ্য, যা ট্রাম্প প্রশাসনের বৃহত্তর পরিকল্পনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ধনী অভিবাসীদের আকৃষ্ট করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই বৈশ্বিক অর্থনীতির কেন্দ্রে রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশটি বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, যেমন—মন্দার প্রভাব, কর্মসংস্থানের সংকট, এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের নিম্নগতি। ‘গোল্ড কার্ড’ প্রকল্পের মাধ্যমে, ধনী বিদেশি নাগরিকদের সহজে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হবে, যাতে তারা বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে মার্কিন অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করতে পারেন।
এটি মূলত বিশ্বের ধনী ব্যবসায়ীদের যুক্তরাষ্ট্রমুখী করার এক কৌশল। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, যেসব দেশ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দ্রুত এগিয়ে চলেছে—যেমন ভারত, চীন, মধ্যপ্রাচ্য ও রাশিয়া—সেখানকার উচ্চবিত্ত শ্রেণির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব এক আকর্ষণীয় সম্পদ। ফলে, এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রচুর ধনী পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসবে, এবং তাদের বিনিয়োগের ফলে ব্যবসায়িক খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।
মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য সহজ বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ব্যবসা শুরু করা বা একটি বড় কোম্পানির অংশীদার হওয়া এখনো জটিল ও ব্যয়বহুল। ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা এমন একটি পথ তৈরি করবে, যেখানে ধনী বিনিয়োগকারীরা সহজেই মার্কিন বাজারে প্রবেশ করতে পারবেন। এই পরিকল্পনায় বিদেশি ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র নাগরিকত্বই পাবেন না, বরং মার্কিন কোম্পানির অংশীদার হয়ে দেশটির কর্পোরেট জগতে দৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।
এতে সবচেয়ে বড় লাভ হবে প্রযুক্তি, রিয়েল এস্টেট, এবং উৎপাদনশীল শিল্পগুলোর। বর্তমানে, শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যেমন—Google, Apple, এবং Tesla—তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগ খুঁজছে। ‘গোল্ড কার্ড’ প্রোগ্রামের আওতায় ধনী বিদেশিরা এসব কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারবেন, যা মার্কিন কর্পোরেট জগতে বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধি করবে।
বিশ্ব মেধা ও প্রতিভা ধরে রাখা
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই মেধাবী ছাত্র, গবেষক এবং উদ্ভাবকদের জন্য একটি স্বপ্নের গন্তব্য। হার্ভার্ড, এমআইটি, ইয়েল, ও স্ট্যানফোর্ডের মতো বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবছর হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে আসে, কিন্তু উচ্চশিক্ষা শেষ হওয়ার পর বেশিরভাগেরই যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ সীমিত থাকে।
‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা কেবল বিনিয়োগকারীদের জন্যই নয়, বরং সম্ভাবনাময় তরুণ মেধাবীদেরও সহজে স্থায়ী হওয়ার রাস্তা করে দিতে পারে। উচ্চশিক্ষিত, গবেষণাধর্মী এবং স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের যদি যুক্তরাষ্ট্রে সহজ অভিবাসনের সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তারা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার পরিবর্তে মার্কিন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা
বর্তমানে, অনেক দেশই ‘গোল্ডেন ভিসা’ বা বিনিয়োগভিত্তিক অভিবাসন প্রোগ্রাম চালু করেছে। ইউরোপের কিছু দেশ, যেমন—মাল্টা, পর্তুগাল, এবং গ্রিস ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ তৈরি করেছে। কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াও একই ধরনের ভিসা প্রোগ্রাম চালু রেখেছে, যা ধনী অভিবাসীদের আকৃষ্ট করছে।
যুক্তরাষ্ট্র চায় না যে এই ধনী ব্যবসায়ীরা অন্য দেশে চলে যাক। তাই ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা কার্যত এক প্রতিযোগিতামূলক উদ্যোগ, যাতে বিশ্বের শীর্ষ বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রকেই তাদের নতুন বাড়ি হিসেবে বেছে নেন।
রাজনৈতিক ও কৌশলগত লক্ষ্য
ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা। তবে এটি একেবারেই স্পষ্ট যে, তার এই নিয়ন্ত্রণ শুধু মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত অভিবাসীদের জন্য ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন সব সময় উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সুযোগ তৈরি করতে আগ্রহী ছিল।
এই ভিসা প্রকল্প মূলত সেই লক্ষ্যকেই আরও সুসংহত করবে। নিম্ন আয়ের শ্রমিক বা রাজনৈতিক শরণার্থীদের জন্য মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থাকে কঠোর করা হলেও, ধনী ব্যক্তিদের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়াকে সহজ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি বার্তা দিচ্ছে যে, অভিবাসন এখন আর সাধারণ মানুষের অধিকার নয়, বরং এটি সম্পদশালী ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা।
এখনো কি এরকম কোনো প্রোগ্রাম আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় বর্তমানে বিনিয়োগভিত্তিক বেশ কিছু ভিসা প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসার মতো সরলীকৃত ও বিশাল বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্বের পথ এতটা উন্মুক্ত নয়। বর্তমানে বিদ্যমান বিনিয়োগভিত্তিক ভিসা প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে EB-5 ইনভেস্টর ভিসা প্রোগ্রাম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
EB-5 ভিসা: বিনিয়োগের মাধ্যমে অভিবাসনের প্রচলিত পথ
EB-5 (Employment-Based Fifth Preference) ভিসা হলো বিনিয়োগের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ লাভের একটি পুরোনো ও পরীক্ষিত প্রক্রিয়া। এটি ১৯৯০ সালে চালু হয় এবং মূলত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়।
এই ভিসার আওতায় একজন আবেদনকারীকে—
✔ কমপক্ষে ৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হয় (যদি সেই অঞ্চলটি গ্রামীণ বা উন্নয়নশীল হয়) অথবা ১.০৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হয় যদি সেটি শহরাঞ্চলে হয়।
✔ কমপক্ষে ১০ জন মার্কিন নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে হয়।
✔ বিনিয়োগের প্রকল্প হতে হবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমোদিত।
✔ প্রথমে ‘সশর্ত গ্রিন কার্ড’ মেলে, যা দুই বছর পর নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে স্থায়ী গ্রিন কার্ডে রূপান্তরিত হয়।
এই প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ ও কঠিন। আবেদন জমা দেওয়ার পর অনুমোদন পেতে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ সফল না হলে আবেদন বাতিল হয়ে যায়, ফলে আবেদনকারীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
EB-5 বনাম ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা: মূল পার্থক্য কোথায়?
যদিও EB-5 ভিসা দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের প্রধান পথ ছিল, তবুও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি মূলত সেই সীমাবদ্ধতাগুলোকেই কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
বিনিয়োগের পরিমাণ
– EB-5 ভিসার জন্য সর্বনিম্ন বিনিয়োগ প্রয়োজন ৮ লাখ থেকে ১.০৫ মিলিয়ন ডলার।
– ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসার জন্য বিনিয়োগের ন্যূনতম সীমা ৫ মিলিয়ন ডলার, যা EB-5-এর চেয়ে বহুগুণ বেশি।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাধ্যতামূলক কিনা?
– EB-5 ভিসার শর্ত অনুযায়ী, আবেদনকারীকে কমপক্ষে ১০ জন মার্কিন নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।
– ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার বাধ্যবাধকতা রাখা হতে পারে না, বরং বিনিয়োগের মাধ্যমেই আবেদনকারী স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন।
প্রথমে অস্থায়ী নাকি সরাসরি স্থায়ী গ্রিন কার্ড?
– EB-5 ভিসা আবেদনকারী প্রথমে দুই বছরের জন্য শর্তযুক্ত গ্রিন কার্ড পান, এবং সফলভাবে বিনিয়োগ পরিচালিত হলে পূর্ণাঙ্গ গ্রিন কার্ড পান।
– ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সরাসরি স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে, যা অভিবাসনের জটিলতা কমিয়ে আনবে।
প্রক্রিয়ার সময়কাল
– EB-5 ভিসা পাওয়ার জন্য বেশ কয়েক বছর লেগে যায়।
– ‘গোল্ড কার্ড’ প্রোগ্রাম হলে, এটি মাত্র ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যেই অনুমোদিত হতে পারে।
কিন্তু ঝুঁকি কোথায়?
যে কোনো মহৎ পরিকল্পনার অন্তরালে লুকিয়ে থাকে একাধিক স্তরের সুক্ষ্ম চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা আপাতদৃষ্টিতে অভিজাত অভিবাসীদের জন্য এক সোনালি সিঁড়ির প্রতিশ্রুতি দিলেও, এর গভীরে রয়েছে কিছু সুপ্ত বিপদ ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, যা দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিকে নাড়া দিতে পারে।
প্রথমত, এই প্রক্রিয়া সহজলভ্য হলেও তা কেবলমাত্র এক বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য বরাদ্দ। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে এমন এক দেশ, যেখানে সুযোগের দরজা সবার জন্য সমানভাবে খোলা থাকার আদর্শ লালিত হয়েছে। কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যেকোনো মানুষ সেখানে নিজের ভাগ্য গড়তে পারেন—এই বিশ্বাসের ওপরই দেশটির স্বপ্ন গঠিত হয়েছে। কিন্তু ‘গোল্ড কার্ড’ ব্যবস্থা কার্যত সেই বিশ্বাসের বিপরীতে দাঁড়ায়, যেখানে অর্থই হয়ে ওঠে একমাত্র যোগ্যতা, আর শ্রম ও মেধার মূল্যায়ন পিছিয়ে পড়ে।
দ্বিতীয়ত, এই প্রকল্পের আওতায় বিশ্বের ধনী ব্যক্তিরা সহজেই মার্কিন বসবাসের অনুমতি পেয়ে যাবেন, কিন্তু এতে স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থানের ওপর কী প্রভাব পড়বে, সেটি এক বড় প্রশ্ন। ধনী বিনিয়োগকারীরা আসার ফলে মার্কিন শহরগুলোর আবাসন বাজার আরও চড়া হয়ে উঠতে পারে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জনগণের জন্য আবাসন সমস্যাকে প্রকট করে তুলতে পারে। নিউইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো বা লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো শহরে ইতোমধ্যেই আবাসন ব্যয় আকাশচুম্বী, এবং যদি ধনীদের ঢল নামে, তাহলে এই সংকট আরও গভীর হতে পারে।
তৃতীয়ত, এই ভিসা প্রোগ্রাম দুর্নীতির ক্ষেত্রেও এক নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে। একবার যদি নাগরিকত্বের বিনিময়ে অর্থ বিনিয়োগের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তি বা অবৈধ সম্পদের মালিকরাও এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবেন। বহু দেশেই ধনী ব্যক্তিরা অর্থ পাচারের পথ খোঁজেন, এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব দিতে শুরু করে, তবে এটি কালো টাকার নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে। এমনকি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও নিজেদের অবৈধ অর্থ ব্যবহার করে আইনি সুরক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
চতুর্থত, এর সামাজিক প্রভাবও মারাত্মক হতে পারে। অভিবাসন ব্যবস্থা যদি শুধুমাত্র ধনী শ্রেণির জন্য সহজ হয়ে যায়, তাহলে এটি সামাজিক বৈষম্যকে আরও তীব্র করে তুলবে। বর্তমানে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু প্রতিভাবান মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চান, কিন্তু কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে তারা আটকে থাকেন। এই নতুন নীতিতে যদি শুধুমাত্র অর্থই মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে যোগ্য ও মেধাবী কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য আমেরিকান স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অভিবাসন নীতির নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দিতে পারে। আমেরিকা সবসময়ই সুযোগের দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল—একটি স্বপ্ন, যেখানে একজন অভিবাসী তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের জীবনকে গড়ে তুলতে পারেন। কিন্তু যদি এই নীতির কারণে অর্থই প্রধান মাপকাঠি হয়ে ওঠে, তাহলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থা এক ধরণের ‘অর্থভিত্তিক ক্লাব’-এ পরিণত হতে পারে, যেখানে শুধুমাত্র ধনীদের প্রবেশাধিকার থাকবে, আর সাধারণ মানুষের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।
অন্য দেশেও কি এমন কিছু আছে?
বিশ্বের অভিবাসন নীতির সূক্ষ্ম বুননে ধনী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার সুতো বহু আগেই বোনা হয়েছে। ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা নতুন কোনো ধারণা নয়, বরং এটি এক বিশ্বব্যাপী অভিজাত অভিবাসন ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি, যেখানে সম্পদের প্রাচুর্যই পাসপোর্টের স্বর্ণালী চাবিকাঠি।
ইউরোপের সূর্যস্নাত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, সেখানে বহুদিন ধরেই বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। পর্তুগাল, মাল্টা, গ্রিস, এবং স্পেনের মতো দেশগুলিতে প্রচলিত ‘গোল্ডেন ভিসা’ প্রোগ্রাম মূলত অভিজাতদের জন্য এক সুরম্য সেতু, যা তাদের স্থানীয় আইনের জটিলতা এড়িয়ে সরাসরি নাগরিকত্বের দিকে নিয়ে যায়। পর্তুগালের ‘গোল্ডেন ভিসা’ কর্মসূচির আওতায় কেউ যদি পাঁচ লাখ ইউরোর বিনিয়োগ করেন, তবে তিনি সহজেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) নাগরিকত্বের পথে অগ্রসর হতে পারেন। অর্থাৎ, শুধু একটি বিনিয়োগই খুলে দিতে পারে ইউরোপের মুক্ত দিগন্তের দ্বার।
মাল্টার প্রোগ্রাম আরও একধাপ এগিয়ে, যেখানে বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুদান দিলেই সরাসরি নাগরিকত্ব মেলে। এই ব্যবস্থা মূলত ধনী অভিবাসীদের আকৃষ্ট করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহকে ত্বরান্বিত করতে গৃহীত হয়েছে। একইভাবে, গ্রিস এবং স্পেনও নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তি ক্রয়ের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের অনুমতি দেয়, যা পরবর্তী ধাপে নাগরিকত্বে পরিণত হয়। এইসব দেশ অভিবাসন ব্যবস্থাকে কেবল একটি আইনগত প্রক্রিয়া হিসেবে নয়, বরং এক লাভজনক অর্থনৈতিক মডেল হিসেবে বিবেচনা করেছে।
কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াও বিনিয়োগভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থার দিক থেকে পিছিয়ে নেই। কানাডার ‘ইনভেস্টর ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম’ উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ পথ উন্মুক্ত করেছে, যেখানে আবেদনকারীদের কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। একইভাবে, অস্ট্রেলিয়া ধনী ব্যবসায়ীদের জন্য ‘সিগনিফিকেন্ট ইনভেস্টর ভিসা’ চালু করেছে, যা মূলত তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।
মধ্যপ্রাচ্যের মরূদ্যান দুবাইও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে, যেখানে ১০ বছরের জন্য ‘গোল্ডেন ভিসা’ দেওয়া হয়। এই ভিসার অধীনে, উচ্চ আয়ের বিনিয়োগকারী, শিল্পোদ্যোগী, এবং মেধাবী পেশাজীবীরা দুবাইয়ের জমকালো অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
তাহলে ট্রাম্পের পরিকল্পনা কতটা অভিনব?
বিশ্বের অভিজাত অভিবাসন ব্যবস্থার তুলনায় ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ পরিকল্পনা অনন্য মনে হতে পারে, কিন্তু এর ভিত্তি নতুন নয়। ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো অঞ্চলগুলো বহু বছর ধরেই অর্থের বিনিময়ে বসবাসের অধিকার দিচ্ছে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অন্যদের চেয়ে বিশিষ্ট এই কারণে যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত অভিবাসন গন্তব্য—যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
প্রশ্ন হলো, এই পরিকল্পনা কি শুধু ধনী ব্যক্তিদের জন্য এক রাজপথ, নাকি এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে? যদি ধনীদের জন্য অভিবাসন সহজ হয়ে যায়, তবে সাধারণ মানুষের স্বপ্নের আমেরিকা কি ধীরে ধীরে তাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে? উত্তর লুকিয়ে রয়েছে সময়ের গর্ভে।
শেষের প্রতিচ্ছবি
ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা যেন এক সোনালি দ্বার—যেখানে অর্থই মূল চাবিকাঠি, আর ক্ষমতা ও প্রাচুর্যের প্রবল স্রোতে অভিবাসনের চিরাচরিত দর্শন হারিয়ে যেতে বসেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যা যুগে যুগে মেধা, পরিশ্রম আর স্বপ্নের সমাহারে গড়ে উঠেছে, সেই দেশ কি কেবল ধনী অভিবাসীদের জন্য এক সংরক্ষিত ভূমি হয়ে উঠবে?
একদিকে, বিপুল বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে সঞ্জীবনী সুধা এনে দিতে পারে, নতুন কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলতে পারে। অন্যদিকে, এটি বৈষম্যের সূক্ষ্ম অথচ কঠিন প্রাচীর তুলতে পারে, যেখানে মেধা ও সাধনার বদলে শুধুমাত্র ধনসম্পদের জোরেই অভিবাসনের পথ সুগম হবে।
তাহলে, এই নীতি কি এক নব্য অর্থনৈতিক বিপ্লবের ইঙ্গিত, নাকি এটি আমেরিকান স্বপ্নের রঙিন চিত্রপটকে ধীরে ধীরে বিবর্ণ করে দেবে? সময়ের স্রোত বয়ে চলবে, আর তার তরঙ্গেই লুকিয়ে থাকবে এই প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তর।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো