পশ্চিমবঙ্গের পানিহাটি এলাকার এক তরুণী আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। অভিযোগ, উচ্চ আয়ের প্রলোভনে হাওড়ায় ডেকে নিয়ে গিয়ে এক ব্যক্তি ও তার মা মিলে তাকে ছয় মাস ধরে একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখে। তরুণী পর্নোগ্রাফি ভিডিওতে অভিনয় ও বার ডান্সে কাজ করতে অস্বীকার করায় তার উপর চালানো হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। ভাঙা হয়েছে হাত, পা ও দাঁত—মারধর চলেছে লোহার রড দিয়ে। বর্তমানে তিনি সাগর দত্ত মেডিক্যালে ভর্তি। পুলিশ তদন্তে নেমেছে, অভিযুক্তরা পলাতক। সমাজ স্তব্ধ, প্রশ্ন ওঠে—’না’ বলাটাই কি আজ অপরাধ?

📌 স্টোরি হাইলাইটস

  • নির্যাতনের শিকার তরুণী পানিহাটির বাসিন্দা, অভিযুক্ত হাওড়ার

  • ভয়ঙ্কর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ, লোহার রড দিয়ে মারধর

  • জোর করে পর্নোগ্রাফি ও বার ডান্সে নামাতে চাওয়া হয়

  • অভিযুক্ত আরিয়ান খান ও তার মা শ্বেতা পলাতক, প্রোডাকশন হাউস ঘিরে সন্দেহ

  • পুলিশের কাছে অভিযোগ, তদন্ত শুরু, অভিযুক্তদের হদিস মেলেনি

উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটি এলাকার এক তরুণী বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তিনি ভর্তি রয়েছেন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পরিবারের অভিযোগ, হাওড়া জেলার এক ব্যক্তি ও তার মা ওই তরুণীকে কাজের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে গিয়ে টানা ছয় মাস ধরে ফ্ল্যাটে আটকে রেখে ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। তরুণীর অপরাধ—তিনি পর্ন ভিডিওতে অভিনয় করতে ও বার ডান্সে নামতে অস্বীকার করেছিলেন।

ঘটনাটির সূত্রপাত ঘটে, যখন পানিহাটির ওই তরুণী চাকরির খোঁজে ছিলেন। একসময় তিনি একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সময় তাঁর পরিচয় হয় হাওড়ার বাসিন্দা আরিয়ান খানের সঙ্গে। আরিয়ান একটি বেশি আয় সম্পন্ন চাকরির প্রস্তাব দেন। সহজ-সরল তরুণী কাজের সুযোগ মনে করে হাওড়ার ডোমজুড় এলাকায় চলে আসেন। সেখানেই শুরু হয় তাঁর দুঃস্বপ্ন।

পরিবারের অভিযোগ, ডোমজুড়ের এক ফ্ল্যাটে তাঁকে জোর করে আটকে রাখা হয়। ওই ফ্ল্যাটেই থাকতেন অভিযুক্ত আরিয়ান ও তাঁর মা শ্বেতা খান। তরুণীকে জানানো হয়, তাঁকে পর্নোগ্রাফিক ভিডিওতে কাজ করতে হবে এবং সঙ্গে বার ডান্সেও যোগ দিতে হবে। তিনি স্পষ্টভাবে না বলায় শুরু হয় লাগাতার নির্যাতন।

তরুণীর শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। মাথা, কোমর, পা এমনকি দাঁত পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। খেতে দেওয়া হতো না দিনের পর দিন। শুধু মারধর নয়, অভিযুক্তরা তাঁর যৌনাঙ্গে লোহার রড প্রবেশ করানোরও চেষ্টা করে, এমন ভয়ানক অভিযোগ করেছেন পরিবার।

অবশেষে শনিবার ওই তরুণী কোনওভাবে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। খড়দহ থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপর পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা ইতিমধ্যেই ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন।

এই ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে অভিযুক্তদের খোলা প্রোডাকশন হাউস ‘ইসারা এন্টারটেইনমেন্ট’। ২০২১ সালে ইউটিউবে এই নামে একটি চ্যানেল খোলা হলেও গত চার বছরে মাত্র ১১টি মিউজিক ভিডিও আপলোড হয়েছে। এর পরেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে, আদৌ এটি আসল প্রোডাকশন হাউস না কি পর্নোগ্রাফির আড়ালে পরিচালিত বেআইনি কার্যকলাপের আখড়া।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত শ্বেতা খান, যিনি এলাকায় ফুলতুশি বেগম নামে পরিচিত, এক সময় বার ডান্সার হিসেবে কাজ করতেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। কেউ প্রতিবাদ করলে, আরিয়ান তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করতেন বলেও দাবি করেছেন প্রতিবেশীরা।

এছাড়া জানা গেছে, অভিযুক্ত মা-ছেলে যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ভাড়াও দেননি। পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছে, তবে অভিযুক্তদের হদিস এখনও মেলেনি।

তরুণীর মা কাঁদতে কাঁদতে জানান, “ওই মহিলা আমার মেয়েকে যেভাবে মারধর করেছে, আমি চেয়ে চেয়ে দেখেছি। আমার মেয়ে আর দাঁড়াতে পারছে না। এমন নৃশংসতা আমি ভাবতেও পারিনি। আমি চাই শ্বেতা খানের কঠোরতম শাস্তি হোক।”

এই ঘটনাটি যেমন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তেমনই সমাজের অন্ধকার জগতের এক নির্মম চিত্রও তুলে ধরে। পুলিশ এখন তদন্তে নেমেছে এবং অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই ঘটনার পেছনে আরও বড় কোনও চক্র রয়েছে কি না? তা সময়ই বলবে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply