১৯ বছর আগে সন্ধ্যাবেলায় মাত্র ১১ মিনিটে ৭টি বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল মুম্বই লোকাল ট্রেন পরিষেবা, প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৮৯ জন। আজ, বম্বে হাইকোর্ট ২০১৫-র বিশেষ আদালতের রায় খারিজ করে সব ১২ অভিযুক্তকে খালাস দেয়। বিচারপতিরা বলেন, “প্রসিকিউশন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।” সাক্ষ্য, প্রমাণ, উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক—সবই প্রশ্নবিদ্ধ। একদিকে মুক্তি, অন্যদিকে নিঃশব্দ কান্না—এই রায় নতুন করে আলো ফেলছে দেশের বিচার ও তদন্তব্যবস্থার উপর।

🔹 STORY HIGHLIGHTS

  • ২০০৬ সালের ১১ জুলাই সন্ধ্যায় ১১ মিনিটের মধ্যে সাতটি ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে মুম্বই

  • নিহত ১৮৯ জন, আহত ৮০০-রও বেশি

  • ২০১৫ সালে ১২ জন অভিযুক্তের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৭ জনের যাবজ্জীবন ঘোষণা

  • ২০২৫ সালে হাইকোর্ট জানায়, “সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় অভিযোগ”; সব ১২ জন অভিযুক্ত খালাস

  • বিস্ফোরকের ধরন, সাক্ষ্য, ও উদ্ধার হওয়া বস্তু মামলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়

সময় তার নিজের গতিতে চলে। একসময় যেটা ছিল খবরের শিরোনাম, সেটাই সময়ের আবর্তে হারিয়ে যায় বহু স্মৃতির আড়ালে। তেমনই এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ এক যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করল বম্বে হাইকোর্ট।
২০০৬ সালের ১১ জুলাইয়ের সেই বিভীষিকাময় সন্ধ্যায় সাতটি ধারাবাহিক বিস্ফোরণে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল মুম্বইয়ের জনজীবন। চাপকুকারে ভরে রাখা বোমা, যা মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে একের পর এক ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস কামরায় বিস্ফোরিত হয়েছিল—নিয়ে নিয়েছিল ১৮৯টি প্রাণ, আহত করেছিল ৮০০-রও বেশি যাত্রীকে।

আজ, সেই ভয়াবহ ঘটনার ১৯ বছর পেরিয়ে গিয়ে, এক নতুন মোড় নিল মামলাটি। বম্বে হাইকোর্টের দুই বিচারপতি—বিচারপতি অনিল কিলোর এবং বিচারপতি শ্যাম চাঁদকের বেঞ্চ একযোগে রায়দান করেন, যেখানে তাঁরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে,
“প্রসিকিউশন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণে।”
এই একটি বাক্যই যেন প্রশ্ন তোলে গোটা বিচার প্রক্রিয়া, তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে।

২০১৫ সালে মকোকা আইনের অধীনে গঠিত বিশেষ আদালত এই মামলায় ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। তার মধ্যে ফয়সাল শেখ, আসিফ খান, কামাল আনসারি, এহতেশাম সিদ্দিকি এবং নাভিদ খান—এই পাঁচজনের উপর দেওয়া হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড। বাকি সাতজন, অর্থাৎ মোহাম্মদ সাজিদ আনসারি, মোহাম্মদ আলি, ডা. তানভির আনসারি, মাজিদ শফি, মুজাম্মিল শেখ, সোহেল শেখ ও জামির শেখ—প্রাপ্ত হন যাবজ্জীবন সাজা।

তবে আজ, আদালতের রায়ে এক নাটকীয় পরিবর্তন দেখা গেল। বিচারপতিরা বলেন—
“এই ঘটনার পর একশো দিন পার হয়ে গিয়েছিল। কোনও ব্যক্তি কীভাবে এত দিন পর সুনির্দিষ্টভাবে অপরাধীর মুখ মনে রাখতে পারেন?”
এই পর্যবেক্ষণ সন্দেহ তোলে সাক্ষীদের স্মৃতিশক্তির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে।

এছাড়াও আদালত জানায়—
“তদন্তের সময় উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক, অস্ত্র ও মানচিত্রের কোনও সংযোগ পাওয়া যায়নি মূল বিস্ফোরণের সঙ্গে। এমনকি, প্রসিকিউশন বোমার প্রকৃত ধরনও প্রমাণে সক্ষম হয়নি।”
এই মন্তব্যে মামলার গোটা ভিত্তি যেন নড়ে ওঠে।

ফলত, আদালত স্পষ্ট করে বলে দেয়—
“অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। তাই অভিযুক্তদের সাজা বাতিল করা হলো। যদি অন্য কোনও মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকে, তবে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে।”

স্মরণ করা যাক সেই দিনটি—২০০৬ সালের ১১ জুলাই, অফিস ছুটির সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৪ মিনিটে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে। মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে আরও ছয়টি ট্রেনের মধ্যে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে যায়—মহিম জংশন, মাতুঙ্গা রোড, বান্দ্রা, খার রোড, জোগেশ্বরী, ভয়ান্দর এবং বোরিভলি স্টেশনের কাছাকাছি। চাপকুকারের ভিতরে বিস্ফোরক ভরে, যাত্রীদের ব্যাগে রেখে দেওয়া হয়েছিল। জনবহুল ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস কামরা বেছে নেওয়া হয়েছিল যাতে সর্বোচ্চ প্রাণহানি হয়।

আজ যখন সেই মামলার ১২ জন অভিযুক্তের মুক্তির আদেশ জারি হল, তখন শুধুমাত্র আদালতের রায় নয়, প্রশ্ন উঠেছে ন্যায়বিচার, তদন্ত এবং প্রমাণ উপস্থাপনের খুঁটিনাটি নিয়েও।

এই রায় কেবলমাত্র এক মামলার সমাপ্তি নয়, বরং তা হয়ে থাকল দীর্ঘ ১৯ বছরের বিচারযাত্রার এক কঠিন ও বিতর্কিত পরিণতি।

২০০৬ সালের মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণের মতো ভয়াবহ ঘটনায় ১৮৯ প্রাণহানির পর আজকের এই রায় শুধুই আইনি সিদ্ধান্ত নয়, বরং বহু বছরের বিচারপ্রক্রিয়া, তদন্ত এবং সাক্ষ্য প্রমাণের উপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন। যেখানে একদিকে আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ প্রসিকিউশন, সেখানে অন্যদিকে মৃত ও আহতদের পরিবারের চোখে অশ্রু ও সংশয়। ১২ অভিযুক্তের মুক্তির মধ্য দিয়ে এই মামলার পরিণতি যেন আরও একবার আলোচনার কেন্দ্রে এনে ফেলল দেশের বিচারব্যবস্থা ও তদন্তপ্রক্রিয়ার গুণগত মান।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply